হানাফি মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্বে
ইমাম-ই আ’যম আবূ হানিফা (রা:)
মুহাম্মদ মোবারক হোসাইন
ইমাম আ’যম (রা:) এর শুভ জন্ম, নাম-উপনাম :-
আবু হানিফা নোমান ইবনে ছাবিত যওজী। ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্যে অগ্রজ। মুসলিম সমাজে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক। জন্মকাল নিয়ে তিনটি মত আছে ১. ৬৩ হিজরী ২. ৭০ হিজরী ৩. ৮০ হিজরী। তৃতীয় মতটিই প্রসিদ্ধ। কেননা ইমাম আ’যম (রা:) এর পৌত্র ইসমাইল ইবনে হাম্মাদ বলেন, “আমার দাদা ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন”।১ বাগদাদে ১৫০ হিজরীতে ওফাত। উপাধী ইমামে আ’যম। তাঁর নামের শাব্দিক অর্থ পর্যালোচনায় দেখা যাবে তাঁর নামে ও কাজে পুরোপুরি মিল। আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী (রহ:) বলেন অর্থাৎ সকল ইমাম ঐক্যমত পোষণ করেন যে, তাঁর নাম নো’মান। এতে এক গূঢ় রহস্য রয়েছে ১. নো’মান এমন রক্ত, যা দ্বারা শরীরের কাঠামো প্রতিষ্ঠিত থাকে। ২. কেউ কেউ বলেন, নো’মানের অর্থ রুহ। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর মাধ্যমে ফিক্হে ইসলামীর কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ফিকহ শাস্ত্রের দলীলাদি ও বিভিন্ন দুরুহ বিষয়ের সমাধানের মূল। ৩. নু’মান অর্থ লাল সুগন্ধিযুক্ত ঘাস বা বেগুনি রঙের নাম। সে হিসেবে ইমাম আবূ হানিফার (রা:) অভ্যাস ভাল এবং তাঁর গুণাবলি পূর্ণতার শীর্ষে পৌছেছে। ৪. নু’মান শব্দটি “ফু’লান” শব্দের ওযনে “নি’মাত” শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। তখন অর্থ হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমাম আ’যম মানুষের উপর এক বড় নিয়ামত।২
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পারস্যবাসীর এক ভাগ্যবান ব্যক্তির সুসংবাদ দিয়েছেন। সে হাদীসকে ইমাম মুসলিম (রহ:) হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। সরওয়ারে কায়েনাত হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لو كان الدين عند الثريا لناله رجل من فارس او قال من ابناء فارس حتى يتناوله-
-যদি দ্বীন সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ সুরাইয়া সেতারার কাছে গচ্ছিত থাকে তখনও পারস্যবাসীর এক ব্যাক্তি তা অর্জন করে নেবে।৩
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন এ হাদীসটি ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। এতে কোনো আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী (রহ:) “তাবয়িযূস সহিফা” কিতাবে এবং ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহ:) “আল খায়রাতুল হিসান” এর মধ্যে “ইমাম আ’যম আবূ হানিফার (রা:) এর ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ” শিরোণামে অধ্যায় রচনা করেছেন।
শৈশবকাল ও শিক্ষা জীবন :-
শৈশব কেটেছে বসরার কূফা নগরিতে। তৎকালিন ইসলামী নগর হিসেবে কূফা খ্যাতি কুঁড়িয়েছিল।
আবু হানিফা নোমান ইবনে ছাবিত যওজী। ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্যে অগ্রজ। মুসলিম সমাজে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা সর্বাধিক। জন্মকাল নিয়ে তিনটি মত আছে ১. ৬৩ হিজরী ২. ৭০ হিজরী ৩. ৮০ হিজরী। তৃতীয় মতটিই প্রসিদ্ধ। কেননা ইমাম আ’যম (রা:) এর পৌত্র ইসমাইল ইবনে হাম্মাদ বলেন, “আমার দাদা ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন”।১ বাগদাদে ১৫০ হিজরীতে ওফাত। উপাধী ইমামে আ’যম। তাঁর নামের শাব্দিক অর্থ পর্যালোচনায় দেখা যাবে তাঁর নামে ও কাজে পুরোপুরি মিল। আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী (রহ:) বলেন অর্থাৎ সকল ইমাম ঐক্যমত পোষণ করেন যে, তাঁর নাম নো’মান। এতে এক গূঢ় রহস্য রয়েছে ১. নো’মান এমন রক্ত, যা দ্বারা শরীরের কাঠামো প্রতিষ্ঠিত থাকে। ২. কেউ কেউ বলেন, নো’মানের অর্থ রুহ। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর মাধ্যমে ফিক্হে ইসলামীর কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ফিকহ শাস্ত্রের দলীলাদি ও বিভিন্ন দুরুহ বিষয়ের সমাধানের মূল। ৩. নু’মান অর্থ লাল সুগন্ধিযুক্ত ঘাস বা বেগুনি রঙের নাম। সে হিসেবে ইমাম আবূ হানিফার (রা:) অভ্যাস ভাল এবং তাঁর গুণাবলি পূর্ণতার শীর্ষে পৌছেছে। ৪. নু’মান শব্দটি “ফু’লান” শব্দের ওযনে “নি’মাত” শব্দ থেকে নির্গত হয়েছে। তখন অর্থ হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইমাম আ’যম মানুষের উপর এক বড় নিয়ামত।২
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পারস্যবাসীর এক ভাগ্যবান ব্যক্তির সুসংবাদ দিয়েছেন। সে হাদীসকে ইমাম মুসলিম (রহ:) হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণনা করেছেন। সরওয়ারে কায়েনাত হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لو كان الدين عند الثريا لناله رجل من فارس او قال من ابناء فارس حتى يتناوله-
-যদি দ্বীন সপ্তর্ষিমণ্ডলস্থ সুরাইয়া সেতারার কাছে গচ্ছিত থাকে তখনও পারস্যবাসীর এক ব্যাক্তি তা অর্জন করে নেবে।৩
মুহাদ্দিসগণ বলেছেন এ হাদীসটি ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। এতে কোনো আলেম দ্বিমত পোষণ করেননি।
হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী শাফেয়ী (রহ:) “তাবয়িযূস সহিফা” কিতাবে এবং ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহ:) “আল খায়রাতুল হিসান” এর মধ্যে “ইমাম আ’যম আবূ হানিফার (রা:) এর ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুসংবাদ” শিরোণামে অধ্যায় রচনা করেছেন।
শৈশবকাল ও শিক্ষা জীবন :-
শৈশব কেটেছে বসরার কূফা নগরিতে। তৎকালিন ইসলামী নগর হিসেবে কূফা খ্যাতি কুঁড়িয়েছিল।
্থ ফাজিল স্নতক শেষ বর্ষ ফলপ্রার্থী, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা।
এখানে বড় বড় আলেমের মজলিশ বসত। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করার পর ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করলেন। একদিন তিনি ব্যবসার কাজে বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় ইমাম শা’বি (রা:) এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তাঁর চেহারায় অসাধারণ মেধা ও সৌভাগ্যের চিহ্ন দেখতে পান। তিনি তাঁকে ডাকলেন আর বললেন, “কোথায় যাচ্ছ?” ইমাম বললেন, “আমি বাজারে যাচ্ছি।” তিনি বললেন, “আলিমদের মজলিসে বস কারণ, আমি তোমার চেহারায় জ্ঞান ও গুণের চিহ্নাদির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি।”৪
এরপর ইমাম আ’যম (রা:) এর মনে শিক্ষার্জনের আগ্রহ সৃষ্টি হল। প্রথমে তিনি ‘ইলমে কালাম’ শিখতে আরম্ভ করলেন। এতে দক্ষতা অর্জন করে গোমরা ফির্কাগুলো- যেমন জাহমিয়া ও ক্বদরিয়া ফির্কার লোকদের সাথে তর্ক-মোনাযারা আরম্ভ করে দিলেন। এভাবে কিছুদিন এসব বাতিল ফির্কার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন এবং তাদের ভ্রান্তিগুলোকে লোকসমক্ষে আরো স্পষ্ট করে দিলেন।
পরবর্তীতে ফিকহ্ চর্চায় মনোনিবেশ করেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) ছিলেন তৎকালীন একজন ফিকহ শাস্ত্রের গুরু, তিনি তাঁর মজলিশে প্রবেশ করেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা:) এর মূলধারার শিষ্য। হযরত হাম্মাদ (রা:) জ্ঞান আহরণ করেছেন হযরত ইব্রাহীম নখয়ী (রা:) থেকে। যিনি ছিলেন হযরত আলকামা (রা:) এর যোগ্য উত্তরসূরী। হযরত হাম্মাদ (রা:) এর দরসে তিনি বিশেষ স্থান পেয়ে যান এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে ওস্তাদের চোখের মণি হয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যে তিনি ওস্তাদের মর্যাদায় উন্নীত হন। ইত্যবসরে তিনি আলাদা দরসের মজলিস কায়েম করার মনস্থ করলেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) কিছুদিনের জন্য কোথাও যাবেন তখন তিনি ইমাম আ’যম (রা:) কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে ইমাম আ’যম ৬০টা ফতওয়া জারি করেন। পরবর্তীতে হযরত হাম্মাদ (রা:) এর নিকট ফতওয়াগুলো পেশ করা হলে ৪০টি ফতওয়ার সাথে তিনি ঐক্যমত পোষণ করলেন। আর বাকি ২০টি মাসআলায় মুজতাহিদসূলভ বিরোধিতা করলেন। তখন ইমাম আ’যম শপথ করে নিলেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হযরত হাম্মাদ (রা:) এর দরসের মজলিস ছাড়বেন না। তিনি তা পূর্ণও করেছিলেন।৫
১২০ হিজরীতে হযরত হাম্মাদ (রা:) ইন্তেকাল করলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বেই কূফার বিদ্যাপীঠ পরিচালিত হতে থাকে। যাকে তৎকালীন ফোকাহায়ে কেরাম “কিয়াসের প্রতিষ্ঠান” হিসেবে চিহ্নিত করেন। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণ সেখানে হাজির হতে থাকেন। বসরা, মক্কা ও মদিনার আলেমগণও এ থেকে বাদ যাননি। আব্বাসীয় খলিফা আল মানসূর ক্ষমতায় এলে তাঁর এ বিদ্যাপিঠ বাগদাদে স্থানান্তরিত হয়। ওলামায়ে কেরাম তাঁর সাথে তর্ক-বিতর্ক ও গবেষণা করেন। তারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:) থেকে জ্ঞান-পিপাসা নিবারণ করেন।
শিক্ষকবৃন্দ :-
আমাদের সমাজে লা-মাযহাবিরা বলে যে, ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) মুহাদ্দিস ছিলেন না। অথচ তাঁর হাদিস শাস্ত্রে উস্তাদগণ ছিলেন প্রায় চার হাজার।
১. ইমাম আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ হাফস কবির ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যদের মধ্যকার একটি তর্ক তুলে ধরে লিখেছেন, -(এক সময়) ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যগণ ইমাম শাফেয়ীকে ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর উপর মর্যাদা দিচ্ছিলেন, আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ হাফস হানাফী শাফেয়ীগণকে বলেন, “তোমরা ইমাম শাফেয়ীর শিক্ষকগণের গণনা করে বল তাদের সংখ্যা কত”? তাঁরা তখন গণনা করে বললেন, “আশিজন”। তখন হানাফিরা ইমাম আবূ হানিফার ওলামা ও তাবে’ঈ-শিক্ষক গণনা করলেন, তাঁদের সংখ্যা বের হল “চার হাজার”। তখন আবূ আবদুল্লাহ বলেন, “এটা ইমাম শাফেয়ীসহ অন্যান্য ইমামদের উপর ইমাম আবূ হানিফার সামান্য মর্যাদা”।৬
২. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহ:) ইমাম আ’যমের মাশায়েখের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর অনেক শিক্ষক ছিলেন। ইমাম আবূ হাফস তাঁদের থেকে চার হাজার মাশায়েখের গণনা করেছেন। কেউ বলেন, শুধুমাত্র তাঁর তাবে’ঈ মাশায়েখের সংখ্যা চার হাজার।৭
ছাত্রবৃন্দ :-
ইমাম আ’যমের ছাত্রদের সংখ্যাও গণনার বাইরে। ইমাম আবূ ইয়ূসুফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে শায়বাহ্ এবং ইমাম যোফর হলেন তাঁর ওই শত গর্বের উপযোগী শাগরিদ, যাঁরা সমগ্র দুনিয়ায় হানাফী ফিক্বহ্কে প্রসারিত করেছেন। আর ইমাম আ’যমের শিক্ষাকে এভাবে প্রচার করেছেন যে, আজ বিশ্বে দুই’তৃতীয়াংশেরও বেশি মুসলমান হানাফী ফিক্বহ অনুসারে তাঁদের ইবাদত-বন্দেগী ও পার্থিব কার্যাদি সম্পন্ন করছেন। তা’ছাড়াও হাম্মাদ ইবনে নু’মান, ইবরাহিম ইবনে ত্বাহমান, হামযাহ ইবনে হাবিব, আবূ ইয়াহয়া হাম্মানী, আবূ নু’আইম ও আবূ আসেমের মত যুগবরেণ্য ফিক্বহবিদগণও ইমাম আ’যমের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন।৮
আদর্শ চরিত্র :-
ইমাম আ’যম শুধু জ্ঞানে অদ্বিতীয় ছিলেন না, তিনি সুন্দর চরিত্রের দিক দিয়েও অনন্য ছিলেন। তাঁর নির্ভুল চিন্তাধারা ও জ্ঞানের প্রশস্ততা যেভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের একটি কর্মসূচি সরবরাহ করেছে, অনুরূপ তারঁ উন্নত এবং আর্দশ চরিত্রও মানুষের কর্মপদ্ধতিকে মহত্বের উপাদান দান করেছে। তাঁর আদর্শ চরিত্রের বিবরণ দিতে গিয়ে বড় বড় গ্রন্থ ও ইতিহাস রচিত হয়েছে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে একটি মাত্র ঘটনা অবতারণা করার প্রয়াস পাচ্ছি। ইমাম যা’ফরানী লিখেছেন, একদা বাদশাহ্ হারূনুর রশীদ ইমাম আবূ ইয়ুসুফকে বললেন, “ইমাম আবূ হানিফার কিছু গুণ বর্ণনা করুন”। তিনি বললেন, “ইমাম আ’যম হারাম কার্যাদি থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতেন। জ্ঞানবিহীন দ্বীনি বিষয়ে কোন কথা বলতে খুবই ভয় করতেন। তিনি আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদতে চূড়ান্ত পযাের্য়র চেষ্টা করতেন। দুনিয়াবাসীদের সামনে কখনো তাদের প্রশংসা করতেন না। বেশির ভাগ সময় নিশ্চুপ থাকতেন। দ্বীনি মাসাইলের সমাধান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতেন। এত বড় জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত সাদাসিধে ও বিনয়ী ছিলেন। যখন তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হত, তখন তিনি কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করতেন। যদি সেটার উদাহরণ ক্বোরআন ও হাদীসে না পেতেন, তাহলে ক্বিয়াস (অনুমান) করতেন। কারো নিকট থেকে কিছু পাওয়ার অভিলাষ তাঁর ছিল না। কারো সম্পর্কে আলোচনা করলে তার সদগুণাবলী নিয়েই আলোচনা করতেন।” এসব শুনে বাদশাহ্ হারূনুর রশীদ বললেন, “নেক্কার বুযুর্গদের চরিত্র এমনি হয়ে থাকে।” অতঃপর তিনি কেরানীকে বললেন “এ গুণগুলো লিখে নাও,” আর পুত্রকে বললেন, “এসব গুণাবলী মুখস্থ করে নাও।”৯
এখানে বড় বড় আলেমের মজলিশ বসত। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) প্রাথমিক ও প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা অর্জন করার পর ব্যবসার দিকে মনোনিবেশ করলেন। একদিন তিনি ব্যবসার কাজে বাজারে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় ইমাম শা’বি (রা:) এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। তিনি তাঁর চেহারায় অসাধারণ মেধা ও সৌভাগ্যের চিহ্ন দেখতে পান। তিনি তাঁকে ডাকলেন আর বললেন, “কোথায় যাচ্ছ?” ইমাম বললেন, “আমি বাজারে যাচ্ছি।” তিনি বললেন, “আলিমদের মজলিসে বস কারণ, আমি তোমার চেহারায় জ্ঞান ও গুণের চিহ্নাদির উজ্জ্বলতা দেখতে পাচ্ছি।”৪
এরপর ইমাম আ’যম (রা:) এর মনে শিক্ষার্জনের আগ্রহ সৃষ্টি হল। প্রথমে তিনি ‘ইলমে কালাম’ শিখতে আরম্ভ করলেন। এতে দক্ষতা অর্জন করে গোমরা ফির্কাগুলো- যেমন জাহমিয়া ও ক্বদরিয়া ফির্কার লোকদের সাথে তর্ক-মোনাযারা আরম্ভ করে দিলেন। এভাবে কিছুদিন এসব বাতিল ফির্কার বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন এবং তাদের ভ্রান্তিগুলোকে লোকসমক্ষে আরো স্পষ্ট করে দিলেন।
পরবর্তীতে ফিকহ্ চর্চায় মনোনিবেশ করেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) ছিলেন তৎকালীন একজন ফিকহ শাস্ত্রের গুরু, তিনি তাঁর মজলিশে প্রবেশ করেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) ছিলেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা:) এর মূলধারার শিষ্য। হযরত হাম্মাদ (রা:) জ্ঞান আহরণ করেছেন হযরত ইব্রাহীম নখয়ী (রা:) থেকে। যিনি ছিলেন হযরত আলকামা (রা:) এর যোগ্য উত্তরসূরী। হযরত হাম্মাদ (রা:) এর দরসে তিনি বিশেষ স্থান পেয়ে যান এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে ওস্তাদের চোখের মণি হয়ে যান। কিছুদিনের মধ্যে তিনি ওস্তাদের মর্যাদায় উন্নীত হন। ইত্যবসরে তিনি আলাদা দরসের মজলিস কায়েম করার মনস্থ করলেন। হযরত হাম্মাদ (রা:) কিছুদিনের জন্য কোথাও যাবেন তখন তিনি ইমাম আ’যম (রা:) কে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। তাঁর অনুপস্থিতিতে ইমাম আ’যম ৬০টা ফতওয়া জারি করেন। পরবর্তীতে হযরত হাম্মাদ (রা:) এর নিকট ফতওয়াগুলো পেশ করা হলে ৪০টি ফতওয়ার সাথে তিনি ঐক্যমত পোষণ করলেন। আর বাকি ২০টি মাসআলায় মুজতাহিদসূলভ বিরোধিতা করলেন। তখন ইমাম আ’যম শপথ করে নিলেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি হযরত হাম্মাদ (রা:) এর দরসের মজলিস ছাড়বেন না। তিনি তা পূর্ণও করেছিলেন।৫
১২০ হিজরীতে হযরত হাম্মাদ (রা:) ইন্তেকাল করলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর নেতৃত্বে ও কর্তৃত্বেই কূফার বিদ্যাপীঠ পরিচালিত হতে থাকে। যাকে তৎকালীন ফোকাহায়ে কেরাম “কিয়াসের প্রতিষ্ঠান” হিসেবে চিহ্নিত করেন। যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণ সেখানে হাজির হতে থাকেন। বসরা, মক্কা ও মদিনার আলেমগণও এ থেকে বাদ যাননি। আব্বাসীয় খলিফা আল মানসূর ক্ষমতায় এলে তাঁর এ বিদ্যাপিঠ বাগদাদে স্থানান্তরিত হয়। ওলামায়ে কেরাম তাঁর সাথে তর্ক-বিতর্ক ও গবেষণা করেন। তারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:) থেকে জ্ঞান-পিপাসা নিবারণ করেন।
শিক্ষকবৃন্দ :-
আমাদের সমাজে লা-মাযহাবিরা বলে যে, ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) মুহাদ্দিস ছিলেন না। অথচ তাঁর হাদিস শাস্ত্রে উস্তাদগণ ছিলেন প্রায় চার হাজার।
১. ইমাম আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ হাফস কবির ইমাম আবূ হানিফা ও ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যদের মধ্যকার একটি তর্ক তুলে ধরে লিখেছেন, -(এক সময়) ইমাম শাফেয়ীর শিষ্যগণ ইমাম শাফেয়ীকে ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর উপর মর্যাদা দিচ্ছিলেন, আবূ আবদুল্লাহ ইবনে আবূ হাফস হানাফী শাফেয়ীগণকে বলেন, “তোমরা ইমাম শাফেয়ীর শিক্ষকগণের গণনা করে বল তাদের সংখ্যা কত”? তাঁরা তখন গণনা করে বললেন, “আশিজন”। তখন হানাফিরা ইমাম আবূ হানিফার ওলামা ও তাবে’ঈ-শিক্ষক গণনা করলেন, তাঁদের সংখ্যা বের হল “চার হাজার”। তখন আবূ আবদুল্লাহ বলেন, “এটা ইমাম শাফেয়ীসহ অন্যান্য ইমামদের উপর ইমাম আবূ হানিফার সামান্য মর্যাদা”।৬
২. ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (রহ:) ইমাম আ’যমের মাশায়েখের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর অনেক শিক্ষক ছিলেন। ইমাম আবূ হাফস তাঁদের থেকে চার হাজার মাশায়েখের গণনা করেছেন। কেউ বলেন, শুধুমাত্র তাঁর তাবে’ঈ মাশায়েখের সংখ্যা চার হাজার।৭
ছাত্রবৃন্দ :-
ইমাম আ’যমের ছাত্রদের সংখ্যাও গণনার বাইরে। ইমাম আবূ ইয়ূসুফ, ইমাম মুহাম্মদ ইবনে শায়বাহ্ এবং ইমাম যোফর হলেন তাঁর ওই শত গর্বের উপযোগী শাগরিদ, যাঁরা সমগ্র দুনিয়ায় হানাফী ফিক্বহ্কে প্রসারিত করেছেন। আর ইমাম আ’যমের শিক্ষাকে এভাবে প্রচার করেছেন যে, আজ বিশ্বে দুই’তৃতীয়াংশেরও বেশি মুসলমান হানাফী ফিক্বহ অনুসারে তাঁদের ইবাদত-বন্দেগী ও পার্থিব কার্যাদি সম্পন্ন করছেন। তা’ছাড়াও হাম্মাদ ইবনে নু’মান, ইবরাহিম ইবনে ত্বাহমান, হামযাহ ইবনে হাবিব, আবূ ইয়াহয়া হাম্মানী, আবূ নু’আইম ও আবূ আসেমের মত যুগবরেণ্য ফিক্বহবিদগণও ইমাম আ’যমের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন।৮
আদর্শ চরিত্র :-
ইমাম আ’যম শুধু জ্ঞানে অদ্বিতীয় ছিলেন না, তিনি সুন্দর চরিত্রের দিক দিয়েও অনন্য ছিলেন। তাঁর নির্ভুল চিন্তাধারা ও জ্ঞানের প্রশস্ততা যেভাবে ক্বিয়ামত পর্যন্ত মানুষের একটি কর্মসূচি সরবরাহ করেছে, অনুরূপ তারঁ উন্নত এবং আর্দশ চরিত্রও মানুষের কর্মপদ্ধতিকে মহত্বের উপাদান দান করেছে। তাঁর আদর্শ চরিত্রের বিবরণ দিতে গিয়ে বড় বড় গ্রন্থ ও ইতিহাস রচিত হয়েছে। এ ক্ষুদ্র পরিসরে একটি মাত্র ঘটনা অবতারণা করার প্রয়াস পাচ্ছি। ইমাম যা’ফরানী লিখেছেন, একদা বাদশাহ্ হারূনুর রশীদ ইমাম আবূ ইয়ুসুফকে বললেন, “ইমাম আবূ হানিফার কিছু গুণ বর্ণনা করুন”। তিনি বললেন, “ইমাম আ’যম হারাম কার্যাদি থেকে কঠোরভাবে বিরত থাকতেন। জ্ঞানবিহীন দ্বীনি বিষয়ে কোন কথা বলতে খুবই ভয় করতেন। তিনি আল্লাহ তা’য়ালার ইবাদতে চূড়ান্ত পযাের্য়র চেষ্টা করতেন। দুনিয়াবাসীদের সামনে কখনো তাদের প্রশংসা করতেন না। বেশির ভাগ সময় নিশ্চুপ থাকতেন। দ্বীনি মাসাইলের সমাধান নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতেন। এত বড় জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও অত্যন্ত সাদাসিধে ও বিনয়ী ছিলেন। যখন তাঁকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হত, তখন তিনি কিতাব ও সুন্নাহ’র দিকে প্রত্যাবর্তন করতেন। যদি সেটার উদাহরণ ক্বোরআন ও হাদীসে না পেতেন, তাহলে ক্বিয়াস (অনুমান) করতেন। কারো নিকট থেকে কিছু পাওয়ার অভিলাষ তাঁর ছিল না। কারো সম্পর্কে আলোচনা করলে তার সদগুণাবলী নিয়েই আলোচনা করতেন।” এসব শুনে বাদশাহ্ হারূনুর রশীদ বললেন, “নেক্কার বুযুর্গদের চরিত্র এমনি হয়ে থাকে।” অতঃপর তিনি কেরানীকে বললেন “এ গুণগুলো লিখে নাও,” আর পুত্রকে বললেন, “এসব গুণাবলী মুখস্থ করে নাও।”৯
ইবাদত ও সাধনা :-
ইমাম আযম আবূ হানিফা (রা:) দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এশার নামাযের ওযূ দিয়ে ফজরের নামায সম্পন্ন করেছেন। ইমাম আবূ ইয়ূসুফ (রহ:) বলেছেন, ইমাম আযম (রা:) সারারাত জেগে ইবাদত করার বাহ্যিক কারণ এ ছিল যে, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে দেখে বলল, “ইনি ওই ব্যক্তি, যিনি সারারাত ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করেন”। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এ কথা শুনে বলতে লাগলেন, “আমাকে মানুষের ধারণানূসারে গঠন করতে হবে”। এরপর থেকে তিনি সারারাত জেগে ইবাদত করতে লাগলেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ তাঁর এ নিয়ম অব্যাহত ছিল।১০
ইমাম আ’যমের (রা:)-এর ব্যাপারে অপপ্রচার :-
লা-মাযহাবি/আহলে হাদিস সম্প্রদায় ইমাম আ’যম (রা:) এর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলে- “আবূ হানিফা হাদিস জানতেন না। তিনি সহিহ হাদিস বাদ দিয়ে দুর্বল হাদিস বর্ণনা করতেন।” সেই কারণে তারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:)-এর মাযহাব বাদ দিয়ে হাদিসের উপর আমল করতে শুরু করেছে। এবং তাদের মাযহাবের নাম দিয়েছে “লা-মাযহাবী”। বাংলা বুখারী পড়ে ওখানে তারা হাদিস পেয়েছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করতেন, তাদের কথা “বুখারী শরীফে পাঁচটি হাদিস আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করেছেন এখন কার কথা মানব নবীজির কথা না ইমাম আবূ হানিফার কথা”। এ নিয়ে তারা কোঁমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে। অথচ তারা যে বোকার স্বর্গে বাস করছে তার সামান্যতম খবরও তাদের নেই। বুখারী শরীফের মধ্যে আমরা যে পাঁচটি হাদীস দেখতে পাই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করেছেন, সেই বূখারী শরীফের হাদিসগুলোর পাশেই হাশীয়ায় স্পষ্ট ভাষায় লেখা–
واجابوا عن حديث الباب ونحوه بانه محمول على انه كان فى ابتداء الاسلام ثم نسخ والدليل عليه ان عبدالله بن الزبير رضى الله عنه راى رجلا يرفع يديه فى الصلوة عند الركوع وعند رفع رأسه من الركوع فقال لا تفعل بذاشئ فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تركه ويويد النسخ ما رواه الطحاوى باسند صحيح حدثنا ابن ابى داود قال انا احمد بن عبد الله ابن يونس قال انا ابو بكربن عياش عن حصين عن مجاهد قال صليت خلف ابن عمر فلم يكن يرفع يديه الا فى التكبيرة الاولى من الصلوة-
অর্থাৎ: তরজুমাতুল বাব ও অন্যান্য জায়গায় বর্ণিত হাদিসের জবাব প্রদান করে ওলামায়ে কেরাম বলেন, উল্লেখিত হাদিস সমূহের উপর ইসলামের প্রথম যুগে আমল করা হত, পরবর্তীতে তার আমল রহিত হয়ে যায়। আমল রহিত হওয়ার দলিল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা:) তিনি এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন নামাযে রুকুতে যাওয়ার সময় ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করতেছেন এটা দেখে তিনি নামাজী ব্যক্তিকে বললেন তুমি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং উঠার সময় হাত উত্তোলন করিও না, কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিকে এ আমল করলেও পরবর্তীতে তা বর্জন করেন। আর এই আমল রহিত হওয়ার দলীল ইমাম ত্বহাভী (রা:) সহিহ সূত্রে হযরত মুজাহিদ (রা:) হতে হাদিস বর্ণনা করে বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) এর পিছনে নামাজ আদায় করেছি, তিনি ‘তাকবিরে ঊলা’ ব্যতীত কোন সময় হাত উত্তোলন (রফয়ে ইয়াদাইন) করেননি।১১
উপরুক্ত দলিল ছাড়াও رفع اليدين না করার ব্যাপারে আরো অনেকগুলো নির্ভরযোগ্য দলিল রয়েছে। ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) رفع اليدين এর ব্যাপারে যে সমাধান দিয়েছেন এটাই সঠিক। তিনি নির্ভরযোগ্য দলিলের ভিত্তিতেই এই সমাধান দিয়েছেন।
সত্যিকার অর্থে কুরআন-হাদীস সম্পর্কে তাদের সঠিক জ্ঞান নেই। এবং ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর জ্ঞান সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা নেই। ইমামে আ’যম আবূ হানিফা (রা:) যেভাবে প্রত্যেকটি বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন আজ পর্যন্ত কেউ এত সুন্দর সমাধান দিতে পারেনি এবং উনার প্রদত্ত সমাধান আদৌ পর্যন্ত কেউ খন্ডাতে পারেনি।
ইমাম আওযায়ী (রা:) যিনি ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর সমকালীন মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রা:) কে বলেন- من هذا المبتدع الذى خرج بالكوفة فيكنى اباحنيفة”কূফায় গজিয়ে উঠা এই বেদাতীর পরিচয় কি? যাকে আবূ হানিফা উপনামে ডাকা হয়”?১২ ইমামে আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর প্রাণাধিক শিষ্য ইবনে মুবারক এ কথা শুনে চুপ থাকেন, এ সময় তিনি কিছু জটিল ও দুর্বোধ্য মাসআলা বর্ণনা করেন এবং সর্বজনগ্রাহ্য ফতোয়ার দিক নির্ণয় করেন। ইমাম আওযায়ী (রা:) বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে বলেন, কে দিয়েছে এই ফতোয়া? ইবনে মুবারক বলেন, ইরাকের জৈনিক শায়খ যার সাক্ষাতে এই মাসআলা ও ফতোয়া জেনেছি। ইমাম আওযায়ী (রা:) বলেন, যিনি এই ফতোয়া দিয়েছেন তিনি মাশায়েখকুল শিরমণি। যাও তার কাছে গিয়ে আরো দ্বীনি এলেম শিখ। ইবনে মুবারক বললেন- সেই শায়খের নাম আবূ হানিফা। পরবর্তীতে মক্কায় ইমামে আ’যম (রা:) এর সাথে ইমাম আওযায়ী (রা:) এর সাক্ষাৎ হয় এবং অনেক মাসআলা নিয়ে আলোচনা (তর্ক-বিতর্ক) হয়। অবশেষে ইমাম আওযায়ী (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে বলেন-
غبطت الرجل بكثرة علمه ووفورعقله واستغفرالله تعالى لقد كنت فى غلط ظاهر والزم الرجل فانه بخلاف ما بلغنى عنه-
“লোকটার গভীর জ্ঞান ও অসামান্য বুদ্ধি বিবেকের প্রতি খামোখাই সমালোচনার তীর ছুড়েছি। এজন্য আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাই। সত্যি বলতে কি আমি প্রকাশ্য ভুলের মাঝে ছিলাম। মহামানবের চরিত্রে এলজাম দিয়েছিলাম। লোকমুখে যা শুনেছি এর থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।”১৩
লোকমুখে শুনে ইমাম আওযায়ী (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সর্ম্পকে সঠিক ধারণা পোষণ করেননি। কিন্তু যখন ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর গভীর জ্ঞানের কথা শুনলেন তখন তিনি তাকে মাশায়েখকুল শিরমণি বলেছেন। আর আজকে যারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সর্ম্পকে মন্তব্য করার মত দু:সাহস করে তাদের অস্তিত্ব ঠিক আছে কিনা খবর নাই। অবস্থা দেখে মনে হয় তারা আধুনিক যুগের সংস্কারক।
তারা বলতে চায় ইমাম আ’যম হাদিস জানতেন না। তাদের সকলের জ্ঞান-চিন্তাভাবনা এক করলে যার এক ফুটা ঘামের সমান হবে না; তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্য মুনাফিক ছাড়া কে করবে।
তিনি সেই ইমাম যিনি মাসআলাসমূহের উসূল বের করতেন। আর সেই উসূলের ভিত্তিতে আনুসঙ্গিক হাজারো মাসআলার উন্মেষ ঘটাতেন। শুধু তাই নয়, তিনি এমন ইমাম যিনি ঘটনা ঘটার আগে ঘটিতব্য বিষয়ের সমাধান বের করে রাখতেন।
ইমাম আ’যম (রা:) এর ফিক্বহশাস্ত্রের সংকলনে আইন-বিধি প্রণয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব বর্ণনাটি বিশেষ প্রনিধানযেগ্য। তিনি বলেন, আমি সর্বাগ্রে কুরআনের সুস্পষ্ট বিধির অনুসরণ করি; সেখানে যদি সুষ্ঠ কোন নির্দেশ না পাই, তবে প্রামাণ্য হাদিসের অনুসন্ধান করি; সেখানে যদি কিছু না পায়, তবে সাহাবিদের মধ্যে মতবেধের ক্ষেত্রে তাঁর যেই অভিমত অধিকতর যুক্তিযুক্ত ও সমিচীন বিবেচিত হয় আমি তা অনুসরণ করি। তাদের সকলের অভিমত পরিত্যাগ করে আমি নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। যদি তাঁদের কারও কোন অভিমত না পাওয়া যায়, শুধু সে ক্ষেত্রে ইমাম নখ’ঈ, ইমাম শা’বী, হাসান বসরী, ইবনে সীরিন, সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব প্রমুখ তাবি’ঈর ন্যায় আমি ইজতেহাদ করি।১৪
আহলে হাদিসদের আরেকটি অপপ্রচার- তারা বলে আবূ হানিফা (রা:) হাদীস ছেড়ে দিয়ে কিয়াসের উপর আমল করেন। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। আসলে এরা এখন যেমন আছে ইমাম আ’যম (রা:)-এর সময়েও ছিল। যেমন : ইমাম আ’যমের (রা:) প্রসিদ্ধ শিষ্য আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ইমাম আয’ম (রা:) ও ইমাম বাকের (রা:) এর সাথে সাক্ষাত লাভের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ইমাম আ’যম (রা:) হযরত ইমাম বাকের (রা:) এর সাথে মদিনা শরীফে সাক্ষাত লাভ করেন। ইমাম আ’যমের উপর অনেক ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি হাদিস ছেড়ে দিয়ে কিয়াসের উপর আমল করার অপবাদ দেন, তাই যখন সাক্ষাত হয় তখন ইমাম বাকের (রা:) ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) থেকে জিজ্ঞেস করলেন,انت الذى خالفت أحاديث جدي صلى الله عليه وسلم بالقياس؟
-আপনি কি ঐ ব্যক্তি যে অনুমানের উপর আমার নানার হাদীসের বিরোধীতা করেন?
ইমাম আ’যম (রা:) বলেন, আল্লাহর পানাহ্! আপনি তাশরীফ রাখুন, আমি আপনাকে আরয করি, আপনার ইজ্জত ও হুরমাত আমাদের উপর এত জরুরী, যে রকম আপনার দাদার ইজ্জত রক্ষা সাহাবিদের উপর জরুরী ছিল। তখন ইমাম বাকের (রা:) তাশরীফ রাখলেন ইমাম আ’যমও তাঁর সামনে বসলেন এবং আরয করলেন, আমি আপনার থেকে তিনটি কথা জানতে চাই, আপনি তাঁর সমাধান দেবেন? প্রথম প্রশ্ন হল- “পুরুষ দুর্বল না মহিলা দুর্বল”? তিনি বললেন, “মহিলা”। অতঃপর ইমাম আবূ হানিফা (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, “মহিলাদের মিরাসে কত অংশ”? তিনি বললেন, মহিলার অংশ পুরুষের অর্ধেক। এ উত্তর শুনে ইমাম আবূ হানিফা (রা:) বললেন, -এটা আপনার নানার ইরশাদ, যদি আমি কিয়াসের মাধ্যমে আপনার নানার কথাকে পরিবর্তন করতে চাইতাম তখন -”পুরুষকে এক অংশ দিতাম ও মহিলাকে ডাবল দিতে বলতাম”। কেননা, মহিলা পুরুষের চেয়ে দুর্বল।
অতঃপর ইমাম আ’যম (রা:) দ্বিতীয় প্রশ্ন তুলে ধরলেন, “নামায উত্তম, না রোযা”? ইমাম বাকের (রা:) বলেন, “নামায”। তখন আবূ হানিফা (রা:) বলেন, -এটা আপনার নানার ইরশাদ, যদি আমি কিয়াসের মাধ্যমে আপনার নানার দ্বীনকে পরিবর্তন করতে চাইতাম, মহিলা যখন হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন যুক্তি দিয়ে বলতাম, “সে রোজা কাযা করার পরিবর্তে যেন নামায কাযা করে”। কারণ, রোযার চেয়ে নামায উত্তম।
অতঃপর ইমাম আ’যম (রা:) তৃতীয় প্রশ্ন করলেন, “পেশাব বেশী নাপাক, না বীর্য”? ইমাম বাকের (রা:) বলেন, “পেশাব”। তখন ইমাম আ’যম (রা:) বললেন, -”যদি আমি যুক্তি দিয়ে আপনার নানার কথা পরিবর্তন করতে চাইতাম, তখন আমি ফতওয়া দিতাম “পেশাব করলে গোসল করতে হবে এবং বীর্য বের হলে অযূ করতে হবে”। কেননা পেশাব বীর্য থেকে বেশী নাপাক। কিন্তু আমি আপনার নানার ধর্ম পরিবর্তন করা থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি”।
এ কথা শুনা মাত্র ইমাম বাকের (রা:) নিজ আসন থেকে উঠে আবূ হানিফার (রা:) এর সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং কপালে চুমু খেলেন।১৫
এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম আ’যম (রা:) এর কুরআন ও হাদিস অনুধাবন এবং দূরদর্শিতার বিপরীতে বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ উত্তাপন করেছিল যে ইমাম বাকের (রা:) এর মত লোকও তাঁর ব্যাপারে সংকোচ প্রকাশ করেছেন। যখন ইমাম আ’যম (রা:) বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে দূরদর্শিতা প্রকাশ করলেন তখন ইমাম বাকের (রা:) শুধু নিজ অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি; বরং ইমাম আ’যম (রা:) এর জ্ঞানের গভিরতার স্বীকৃতি দিলেন। তার সমর্থনে নিম্নোক্ত র্বণনাও বিদ্যমান।
এক সময় ইমাম আ’যম (রা:) মক্কা মুকাররামায় ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা:) এর নিকট উপস্থিত হলেন তখন তিনি আবূ হানিফা (রা:) কে দেখে বলেন, আবূ হানিফা! আপনাকে দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতেছি- আপনি আমার নানার মুছে যাওয়া সুন্নাতকে জিবীত করবেন। আপনি প্রত্যেক দুঃখীকে সাহায্য করবেন এবং প্রত্যেক বিপদগ্রস্থের ডাকে সাড়া দিবেন। বিপদগ্রস্থলোক যখন নিরুপায় হবে তখন আপনার শরণাপন্ন হবে। আপনি পথহারা ব্যক্তিদেরকে পথের দিশা দিবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন। এমনকি আপনি রাস্তায় আল্লাহওয়ালাদের সাথে থাকবেন।১৬
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আওলাদ হযরত ইমাম বাকের (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে এত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে গেলেন। বললেন আপনি আমার নানার সুন্নাতকে জিবীত করবেন। অথচ আজকে লা-মাযহাবী সম্প্রদায় ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর মাযহাব বাদ দিয়ে নিজেরা মনগড়া মাযহাব প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করছে। সুতরাং এই নব্য ফেতনা লা-মাযহাবীদের থেকে আমাদেরকে অবশ্যয়ই দূরে থাকতে হবে। তাদেরকে সর্বাবস্থায় প্রতিহত করতে হবে।
লা-মাযহাবী সম্প্রদায় বুখারী বুখারী বলতে বলতে তাদের “বুখার”(জ্বর) এসে যায় অথচ, ইমাম বুখারী (রহ:) ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে বলেন -”মুহাদ্দিসগণ তাঁর থেকে বর্ণনা করনে, তাঁর মতামত গ্রহণে ও তাঁর হাদীস গ্রহণ করনে নিশ্চুপ ছিলেন”।১৭
তাই সবশেষে একথাই বলা যায় যে, তিনি শুধু ফিক্বাহর ইমাম ছিলেন না; তিনি হাদিসেরও ইমাম ছিলেন। তিনি মুজতাহিদই নয় বরং তিনি ছিলেন একজন “তাবি’ঈ”।১৮
যে যুগকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম خير القرون বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইমাম সা’দ তাঁকে ৫ম স্তরের অন্তরর্ভূক্ত বলেছেন। ইমাম আবূ হানিফা (রা:), আনাস ইবনে মালেক (রা:), আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা:), সাহল ইবনে সা’দ (রা:), আবুত-তুফাইল আমির ইবন ওযাদিলো (রা:) এর মত মহান সাহাবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত পেয়ে নিজেকে ধন্য করেছেন।১৯
আর আজকে আমরা এই যুগে এসে ইমাম আ’যমের ব্যাপারে মন্তব্য করছি একটুক্তি চিন্তা-গবেষণা করে দেখেছি আমি কে আর ইমাম আ’যম কে? আমি কার সমালোচনা করছি। কার ব্যাপারে বলছি তিনি হাদিস জানতেন না, কোন মাযহাবকে না মানার জন্য বলছি। যারা এই সমস্ত কথা বলে তাদের জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা যেখানে শেষ ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা সেখান থেকে শুরু।
সুতরাং ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে এবং তাঁর প্রদত্ত মাসআলা তথা হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজের জিবনকে বাস্তবায়ন করাই একজন আলেম ও প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহিহ বুঝ ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।
আমীন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
ইমাম আযম আবূ হানিফা (রা:) দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ এশার নামাযের ওযূ দিয়ে ফজরের নামায সম্পন্ন করেছেন। ইমাম আবূ ইয়ূসুফ (রহ:) বলেছেন, ইমাম আযম (রা:) সারারাত জেগে ইবাদত করার বাহ্যিক কারণ এ ছিল যে, একদা এক ব্যক্তি তাঁকে দেখে বলল, “ইনি ওই ব্যক্তি, যিনি সারারাত ইবাদতের মধ্যে অতিবাহিত করেন”। ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এ কথা শুনে বলতে লাগলেন, “আমাকে মানুষের ধারণানূসারে গঠন করতে হবে”। এরপর থেকে তিনি সারারাত জেগে ইবাদত করতে লাগলেন। দীর্ঘ চল্লিশ বছর যাবৎ তাঁর এ নিয়ম অব্যাহত ছিল।১০
ইমাম আ’যমের (রা:)-এর ব্যাপারে অপপ্রচার :-
লা-মাযহাবি/আহলে হাদিস সম্প্রদায় ইমাম আ’যম (রা:) এর ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা বলে- “আবূ হানিফা হাদিস জানতেন না। তিনি সহিহ হাদিস বাদ দিয়ে দুর্বল হাদিস বর্ণনা করতেন।” সেই কারণে তারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:)-এর মাযহাব বাদ দিয়ে হাদিসের উপর আমল করতে শুরু করেছে। এবং তাদের মাযহাবের নাম দিয়েছে “লা-মাযহাবী”। বাংলা বুখারী পড়ে ওখানে তারা হাদিস পেয়েছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করতেন, তাদের কথা “বুখারী শরীফে পাঁচটি হাদিস আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করেছেন এখন কার কথা মানব নবীজির কথা না ইমাম আবূ হানিফার কথা”। এ নিয়ে তারা কোঁমড় বেঁধে মাঠে নেমেছে। অথচ তারা যে বোকার স্বর্গে বাস করছে তার সামান্যতম খবরও তাদের নেই। বুখারী শরীফের মধ্যে আমরা যে পাঁচটি হাদীস দেখতে পাই যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম رفع اليدين করেছেন, সেই বূখারী শরীফের হাদিসগুলোর পাশেই হাশীয়ায় স্পষ্ট ভাষায় লেখা–
واجابوا عن حديث الباب ونحوه بانه محمول على انه كان فى ابتداء الاسلام ثم نسخ والدليل عليه ان عبدالله بن الزبير رضى الله عنه راى رجلا يرفع يديه فى الصلوة عند الركوع وعند رفع رأسه من الركوع فقال لا تفعل بذاشئ فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تركه ويويد النسخ ما رواه الطحاوى باسند صحيح حدثنا ابن ابى داود قال انا احمد بن عبد الله ابن يونس قال انا ابو بكربن عياش عن حصين عن مجاهد قال صليت خلف ابن عمر فلم يكن يرفع يديه الا فى التكبيرة الاولى من الصلوة-
অর্থাৎ: তরজুমাতুল বাব ও অন্যান্য জায়গায় বর্ণিত হাদিসের জবাব প্রদান করে ওলামায়ে কেরাম বলেন, উল্লেখিত হাদিস সমূহের উপর ইসলামের প্রথম যুগে আমল করা হত, পরবর্তীতে তার আমল রহিত হয়ে যায়। আমল রহিত হওয়ার দলিল হিসেবে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা:) তিনি এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন নামাযে রুকুতে যাওয়ার সময় ও উঠার সময় হাত উত্তোলন করতেছেন এটা দেখে তিনি নামাজী ব্যক্তিকে বললেন তুমি রুকুতে যাওয়ার সময় এবং উঠার সময় হাত উত্তোলন করিও না, কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম দিকে এ আমল করলেও পরবর্তীতে তা বর্জন করেন। আর এই আমল রহিত হওয়ার দলীল ইমাম ত্বহাভী (রা:) সহিহ সূত্রে হযরত মুজাহিদ (রা:) হতে হাদিস বর্ণনা করে বলেন- আমি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা:) এর পিছনে নামাজ আদায় করেছি, তিনি ‘তাকবিরে ঊলা’ ব্যতীত কোন সময় হাত উত্তোলন (রফয়ে ইয়াদাইন) করেননি।১১
উপরুক্ত দলিল ছাড়াও رفع اليدين না করার ব্যাপারে আরো অনেকগুলো নির্ভরযোগ্য দলিল রয়েছে। ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) رفع اليدين এর ব্যাপারে যে সমাধান দিয়েছেন এটাই সঠিক। তিনি নির্ভরযোগ্য দলিলের ভিত্তিতেই এই সমাধান দিয়েছেন।
সত্যিকার অর্থে কুরআন-হাদীস সম্পর্কে তাদের সঠিক জ্ঞান নেই। এবং ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর জ্ঞান সম্পর্কেও তাদের কোন ধারণা নেই। ইমামে আ’যম আবূ হানিফা (রা:) যেভাবে প্রত্যেকটি বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন আজ পর্যন্ত কেউ এত সুন্দর সমাধান দিতে পারেনি এবং উনার প্রদত্ত সমাধান আদৌ পর্যন্ত কেউ খন্ডাতে পারেনি।
ইমাম আওযায়ী (রা:) যিনি ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর সমকালীন মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস ছিলেন তিনি একবার হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রা:) কে বলেন- من هذا المبتدع الذى خرج بالكوفة فيكنى اباحنيفة”কূফায় গজিয়ে উঠা এই বেদাতীর পরিচয় কি? যাকে আবূ হানিফা উপনামে ডাকা হয়”?১২ ইমামে আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর প্রাণাধিক শিষ্য ইবনে মুবারক এ কথা শুনে চুপ থাকেন, এ সময় তিনি কিছু জটিল ও দুর্বোধ্য মাসআলা বর্ণনা করেন এবং সর্বজনগ্রাহ্য ফতোয়ার দিক নির্ণয় করেন। ইমাম আওযায়ী (রা:) বিস্ময় বিমূঢ় হয়ে বলেন, কে দিয়েছে এই ফতোয়া? ইবনে মুবারক বলেন, ইরাকের জৈনিক শায়খ যার সাক্ষাতে এই মাসআলা ও ফতোয়া জেনেছি। ইমাম আওযায়ী (রা:) বলেন, যিনি এই ফতোয়া দিয়েছেন তিনি মাশায়েখকুল শিরমণি। যাও তার কাছে গিয়ে আরো দ্বীনি এলেম শিখ। ইবনে মুবারক বললেন- সেই শায়খের নাম আবূ হানিফা। পরবর্তীতে মক্কায় ইমামে আ’যম (রা:) এর সাথে ইমাম আওযায়ী (রা:) এর সাক্ষাৎ হয় এবং অনেক মাসআলা নিয়ে আলোচনা (তর্ক-বিতর্ক) হয়। অবশেষে ইমাম আওযায়ী (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে বলেন-
غبطت الرجل بكثرة علمه ووفورعقله واستغفرالله تعالى لقد كنت فى غلط ظاهر والزم الرجل فانه بخلاف ما بلغنى عنه-
“লোকটার গভীর জ্ঞান ও অসামান্য বুদ্ধি বিবেকের প্রতি খামোখাই সমালোচনার তীর ছুড়েছি। এজন্য আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাই। সত্যি বলতে কি আমি প্রকাশ্য ভুলের মাঝে ছিলাম। মহামানবের চরিত্রে এলজাম দিয়েছিলাম। লোকমুখে যা শুনেছি এর থেকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম।”১৩
লোকমুখে শুনে ইমাম আওযায়ী (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সর্ম্পকে সঠিক ধারণা পোষণ করেননি। কিন্তু যখন ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর গভীর জ্ঞানের কথা শুনলেন তখন তিনি তাকে মাশায়েখকুল শিরমণি বলেছেন। আর আজকে যারা ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সর্ম্পকে মন্তব্য করার মত দু:সাহস করে তাদের অস্তিত্ব ঠিক আছে কিনা খবর নাই। অবস্থা দেখে মনে হয় তারা আধুনিক যুগের সংস্কারক।
তারা বলতে চায় ইমাম আ’যম হাদিস জানতেন না। তাদের সকলের জ্ঞান-চিন্তাভাবনা এক করলে যার এক ফুটা ঘামের সমান হবে না; তাঁর সম্পর্কে এমন মন্তব্য মুনাফিক ছাড়া কে করবে।
তিনি সেই ইমাম যিনি মাসআলাসমূহের উসূল বের করতেন। আর সেই উসূলের ভিত্তিতে আনুসঙ্গিক হাজারো মাসআলার উন্মেষ ঘটাতেন। শুধু তাই নয়, তিনি এমন ইমাম যিনি ঘটনা ঘটার আগে ঘটিতব্য বিষয়ের সমাধান বের করে রাখতেন।
ইমাম আ’যম (রা:) এর ফিক্বহশাস্ত্রের সংকলনে আইন-বিধি প্রণয়নের পদ্ধতি সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব বর্ণনাটি বিশেষ প্রনিধানযেগ্য। তিনি বলেন, আমি সর্বাগ্রে কুরআনের সুস্পষ্ট বিধির অনুসরণ করি; সেখানে যদি সুষ্ঠ কোন নির্দেশ না পাই, তবে প্রামাণ্য হাদিসের অনুসন্ধান করি; সেখানে যদি কিছু না পায়, তবে সাহাবিদের মধ্যে মতবেধের ক্ষেত্রে তাঁর যেই অভিমত অধিকতর যুক্তিযুক্ত ও সমিচীন বিবেচিত হয় আমি তা অনুসরণ করি। তাদের সকলের অভিমত পরিত্যাগ করে আমি নতুন কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। যদি তাঁদের কারও কোন অভিমত না পাওয়া যায়, শুধু সে ক্ষেত্রে ইমাম নখ’ঈ, ইমাম শা’বী, হাসান বসরী, ইবনে সীরিন, সাঈদ ইবনে মুসায়্যাব প্রমুখ তাবি’ঈর ন্যায় আমি ইজতেহাদ করি।১৪
আহলে হাদিসদের আরেকটি অপপ্রচার- তারা বলে আবূ হানিফা (রা:) হাদীস ছেড়ে দিয়ে কিয়াসের উপর আমল করেন। এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট কথা। আসলে এরা এখন যেমন আছে ইমাম আ’যম (রা:)-এর সময়েও ছিল। যেমন : ইমাম আ’যমের (রা:) প্রসিদ্ধ শিষ্য আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ইমাম আয’ম (রা:) ও ইমাম বাকের (রা:) এর সাথে সাক্ষাত লাভের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ইমাম আ’যম (রা:) হযরত ইমাম বাকের (রা:) এর সাথে মদিনা শরীফে সাক্ষাত লাভ করেন। ইমাম আ’যমের উপর অনেক ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি হাদিস ছেড়ে দিয়ে কিয়াসের উপর আমল করার অপবাদ দেন, তাই যখন সাক্ষাত হয় তখন ইমাম বাকের (রা:) ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) থেকে জিজ্ঞেস করলেন,انت الذى خالفت أحاديث جدي صلى الله عليه وسلم بالقياس؟
-আপনি কি ঐ ব্যক্তি যে অনুমানের উপর আমার নানার হাদীসের বিরোধীতা করেন?
ইমাম আ’যম (রা:) বলেন, আল্লাহর পানাহ্! আপনি তাশরীফ রাখুন, আমি আপনাকে আরয করি, আপনার ইজ্জত ও হুরমাত আমাদের উপর এত জরুরী, যে রকম আপনার দাদার ইজ্জত রক্ষা সাহাবিদের উপর জরুরী ছিল। তখন ইমাম বাকের (রা:) তাশরীফ রাখলেন ইমাম আ’যমও তাঁর সামনে বসলেন এবং আরয করলেন, আমি আপনার থেকে তিনটি কথা জানতে চাই, আপনি তাঁর সমাধান দেবেন? প্রথম প্রশ্ন হল- “পুরুষ দুর্বল না মহিলা দুর্বল”? তিনি বললেন, “মহিলা”। অতঃপর ইমাম আবূ হানিফা (রা:) জিজ্ঞেস করলেন, “মহিলাদের মিরাসে কত অংশ”? তিনি বললেন, মহিলার অংশ পুরুষের অর্ধেক। এ উত্তর শুনে ইমাম আবূ হানিফা (রা:) বললেন, -এটা আপনার নানার ইরশাদ, যদি আমি কিয়াসের মাধ্যমে আপনার নানার কথাকে পরিবর্তন করতে চাইতাম তখন -”পুরুষকে এক অংশ দিতাম ও মহিলাকে ডাবল দিতে বলতাম”। কেননা, মহিলা পুরুষের চেয়ে দুর্বল।
অতঃপর ইমাম আ’যম (রা:) দ্বিতীয় প্রশ্ন তুলে ধরলেন, “নামায উত্তম, না রোযা”? ইমাম বাকের (রা:) বলেন, “নামায”। তখন আবূ হানিফা (রা:) বলেন, -এটা আপনার নানার ইরশাদ, যদি আমি কিয়াসের মাধ্যমে আপনার নানার দ্বীনকে পরিবর্তন করতে চাইতাম, মহিলা যখন হায়েয থেকে পবিত্রতা অর্জন করবে তখন যুক্তি দিয়ে বলতাম, “সে রোজা কাযা করার পরিবর্তে যেন নামায কাযা করে”। কারণ, রোযার চেয়ে নামায উত্তম।
অতঃপর ইমাম আ’যম (রা:) তৃতীয় প্রশ্ন করলেন, “পেশাব বেশী নাপাক, না বীর্য”? ইমাম বাকের (রা:) বলেন, “পেশাব”। তখন ইমাম আ’যম (রা:) বললেন, -”যদি আমি যুক্তি দিয়ে আপনার নানার কথা পরিবর্তন করতে চাইতাম, তখন আমি ফতওয়া দিতাম “পেশাব করলে গোসল করতে হবে এবং বীর্য বের হলে অযূ করতে হবে”। কেননা পেশাব বীর্য থেকে বেশী নাপাক। কিন্তু আমি আপনার নানার ধর্ম পরিবর্তন করা থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি”।
এ কথা শুনা মাত্র ইমাম বাকের (রা:) নিজ আসন থেকে উঠে আবূ হানিফার (রা:) এর সাথে আলিঙ্গন করলেন এবং কপালে চুমু খেলেন।১৫
এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, ইমাম আ’যম (রা:) এর কুরআন ও হাদিস অনুধাবন এবং দূরদর্শিতার বিপরীতে বিরোধীরা তাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ উত্তাপন করেছিল যে ইমাম বাকের (রা:) এর মত লোকও তাঁর ব্যাপারে সংকোচ প্রকাশ করেছেন। যখন ইমাম আ’যম (রা:) বিভিন্ন উপমার মাধ্যমে দূরদর্শিতা প্রকাশ করলেন তখন ইমাম বাকের (রা:) শুধু নিজ অভিযোগ প্রত্যাহার করেননি; বরং ইমাম আ’যম (রা:) এর জ্ঞানের গভিরতার স্বীকৃতি দিলেন। তার সমর্থনে নিম্নোক্ত র্বণনাও বিদ্যমান।
এক সময় ইমাম আ’যম (রা:) মক্কা মুকাররামায় ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রা:) এর নিকট উপস্থিত হলেন তখন তিনি আবূ হানিফা (রা:) কে দেখে বলেন, আবূ হানিফা! আপনাকে দূরদৃষ্টি দিয়ে দেখতেছি- আপনি আমার নানার মুছে যাওয়া সুন্নাতকে জিবীত করবেন। আপনি প্রত্যেক দুঃখীকে সাহায্য করবেন এবং প্রত্যেক বিপদগ্রস্থের ডাকে সাড়া দিবেন। বিপদগ্রস্থলোক যখন নিরুপায় হবে তখন আপনার শরণাপন্ন হবে। আপনি পথহারা ব্যক্তিদেরকে পথের দিশা দিবেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সাহায্যপ্রাপ্ত হবেন। এমনকি আপনি রাস্তায় আল্লাহওয়ালাদের সাথে থাকবেন।১৬
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আওলাদ হযরত ইমাম বাকের (রা:) ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে এত সুন্দর বর্ণনা দিয়ে গেলেন। বললেন আপনি আমার নানার সুন্নাতকে জিবীত করবেন। অথচ আজকে লা-মাযহাবী সম্প্রদায় ইমাম আবূ হানিফা (রা:) এর মাযহাব বাদ দিয়ে নিজেরা মনগড়া মাযহাব প্রতিষ্ঠিত করে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করছে। সুতরাং এই নব্য ফেতনা লা-মাযহাবীদের থেকে আমাদেরকে অবশ্যয়ই দূরে থাকতে হবে। তাদেরকে সর্বাবস্থায় প্রতিহত করতে হবে।
লা-মাযহাবী সম্প্রদায় বুখারী বুখারী বলতে বলতে তাদের “বুখার”(জ্বর) এসে যায় অথচ, ইমাম বুখারী (রহ:) ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে বলেন -”মুহাদ্দিসগণ তাঁর থেকে বর্ণনা করনে, তাঁর মতামত গ্রহণে ও তাঁর হাদীস গ্রহণ করনে নিশ্চুপ ছিলেন”।১৭
তাই সবশেষে একথাই বলা যায় যে, তিনি শুধু ফিক্বাহর ইমাম ছিলেন না; তিনি হাদিসেরও ইমাম ছিলেন। তিনি মুজতাহিদই নয় বরং তিনি ছিলেন একজন “তাবি’ঈ”।১৮
যে যুগকে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম خير القرون বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ইমাম সা’দ তাঁকে ৫ম স্তরের অন্তরর্ভূক্ত বলেছেন। ইমাম আবূ হানিফা (রা:), আনাস ইবনে মালেক (রা:), আবদুল্লাহ ইবনে আবি আওফা (রা:), সাহল ইবনে সা’দ (রা:), আবুত-তুফাইল আমির ইবন ওযাদিলো (রা:) এর মত মহান সাহাবিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাত পেয়ে নিজেকে ধন্য করেছেন।১৯
আর আজকে আমরা এই যুগে এসে ইমাম আ’যমের ব্যাপারে মন্তব্য করছি একটুক্তি চিন্তা-গবেষণা করে দেখেছি আমি কে আর ইমাম আ’যম কে? আমি কার সমালোচনা করছি। কার ব্যাপারে বলছি তিনি হাদিস জানতেন না, কোন মাযহাবকে না মানার জন্য বলছি। যারা এই সমস্ত কথা বলে তাদের জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা যেখানে শেষ ইমাম আ’যম আবূ হানিফা (রা:) এর জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা সেখান থেকে শুরু।
সুতরাং ইমাম আবূ হানিফা (রা:) সম্পর্কে কোন মন্তব্য না করে এবং তাঁর প্রদত্ত মাসআলা তথা হানাফি মাযহাব অনুসারে নিজের জিবনকে বাস্তবায়ন করাই একজন আলেম ও প্রকৃত জ্ঞানীর কাজ। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহিহ বুঝ ও সে অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।
আমীন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
তথ্যসূত্র :
০১. খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১৩/৩২৬; যাহাবী : সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৬/৩৯৫।
০২. ইবনে হাজার হায়তামী : আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৩১।
০৩. মুসলিম শরীফ : আস সহীহ, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা, باب فضل فارس ৪/১৯৭২, হাদিস : ২৫৪৬।
০৪. মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৫৯।
০৫. মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৫৬।
০৬. মুফেক : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৩৮; ইবনে বায্যায করদরী : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৬৮।
০৭. ইবনে হাজার মক্কী : আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৩৬।
০৮. আসকালানী : তাহযিবুত্ তাহযীব ১/৪৪৯।
০৯. করদরী : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা: ১/২২৬।
১০. আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৮২।
১১. বুখারী : পৃষ্ঠা :১০২ হাশিয়া।
১২. আল মিযানুল কুবরা
১৩. আস সাহমূল মুসিব ফী তানিবিল খতিব।
১৪. আসকালানী : তাহযিবুত্ তাহযীব, ১/৪৫১; খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১৩/৩৬৮; আল-ইনতিকা পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৪; মানাক্বিবু ইমাম আবী হানিফা, ১/৮০-৮১।
১৫. মুফেক : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/১৬৮; ইবনে হাজর মক্কী : আল খাইরাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৭৬; আবূ যাহারা : আবূ হানিফা, পৃষ্ঠা : ৭১।
১৬. করদরী : মানাক্বিব-ই ইমাম-ই আ’যম, ১/৩১।
১৭. বুখারী : আত তারিখুল কবীর, ৮/৮১।
১৮. ইবনূন-নাদীম, পৃষ্ঠা : ১০১; ইসলামি বিশ্বকোষ : ইসলামি ফাউন্ডেশন, ২/৩৫৯।
১৯. ইসলামি বিশ্বকোষ : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২/৩৫৯।
০১. খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১৩/৩২৬; যাহাবী : সিয়ারু আ’লামিন নুবালা, ৬/৩৯৫।
০২. ইবনে হাজার হায়তামী : আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৩১।
০৩. মুসলিম শরীফ : আস সহীহ, কিতাবু ফাযায়িলিস সাহাবা, باب فضل فارس ৪/১৯৭২, হাদিস : ২৫৪৬।
০৪. মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৫৯।
০৫. মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৫৬।
০৬. মুফেক : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৩৮; ইবনে বায্যায করদরী : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/৬৮।
০৭. ইবনে হাজার মক্কী : আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৩৬।
০৮. আসকালানী : তাহযিবুত্ তাহযীব ১/৪৪৯।
০৯. করদরী : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা: ১/২২৬।
১০. আল খায়রাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৮২।
১১. বুখারী : পৃষ্ঠা :১০২ হাশিয়া।
১২. আল মিযানুল কুবরা
১৩. আস সাহমূল মুসিব ফী তানিবিল খতিব।
১৪. আসকালানী : তাহযিবুত্ তাহযীব, ১/৪৫১; খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১৩/৩৬৮; আল-ইনতিকা পৃষ্ঠা ১৪২-১৪৪; মানাক্বিবু ইমাম আবী হানিফা, ১/৮০-৮১।
১৫. মুফেক : মানাক্বিবুল ইমামিল আ’যম আবী হানিফা, ১/১৬৮; ইবনে হাজর মক্কী : আল খাইরাতুল হিসান, পৃষ্ঠা : ৭৬; আবূ যাহারা : আবূ হানিফা, পৃষ্ঠা : ৭১।
১৬. করদরী : মানাক্বিব-ই ইমাম-ই আ’যম, ১/৩১।
১৭. বুখারী : আত তারিখুল কবীর, ৮/৮১।
১৮. ইবনূন-নাদীম, পৃষ্ঠা : ১০১; ইসলামি বিশ্বকোষ : ইসলামি ফাউন্ডেশন, ২/৩৫৯।
১৯. ইসলামি বিশ্বকোষ : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২/৩৫৯।
No comments:
Post a Comment