Thursday, September 19, 2013
সমাজে যেসব মাসয়ালা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে সেসবের শরয়ী মর্যাদা কি? ব্লগারের মন্তব্য এবং ডা. ইসরার আহমদ
সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ) ও হানাফী মাযহাব
Related Link:
ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তাবেয়ী ছিলেন।
ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাফিযুল হাদীসও ছিলেন : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
হানাফি মাযহাবের শ্রেষ্ঠত্বে ইমাম-ই আ’যম আবূ হানিফা (রা:)
Wednesday, September 18, 2013
মাযহাব ও হানাফী মাযহাব: অভিযোগের জবাব ও অন্যান্য
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহ.).
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহ.)
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফার মাকাম By শায়েখ আবু হাসসান রাইয়ান (Bangla Video)
নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?
নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?
" তোমরা যারা নামাযে বুকের উপর হাত বাঁধো ", by শায়েখ আবু হাসসান রাইয়ান (Bangla Video)
ঈদের নামাজের তাকবীর
ঈদের নামাজের তাকবীর কত ?
৬ তাকবীরের সাথে ঈদের নামায আদায় করা হাদীস মোতাবেক সম্পূর্ণ সহীহ
পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতির ভিন্নতা
প্রসঙ্গ পুরুষ ও নারীর নামায পদ্ধতির ভিন্নতাঃ শায়েখ আলবানীর অসার বক্তব্য
Difference between Men's and Women's Salah according to Sahih Hadis By Mufti Muhammad Shah Alam(Bangla Video)
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আড়ালে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস চলছে
মাযহাব ও হানাফী মাযহাব: অভিযোগের জবাব ও অন্যান্য -
আস্তে আমীন, জোরে আমীন
সহিহ হাদিসের আলোকে নামাজে কেমনে দাঁড়াবেন ???(Bangla Video)
তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ? (Bangla Video)
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন? (Bangla Video)
Tuesday, September 17, 2013
Is saying Ameen loudly in Sahih Bukhari?
আস্তে আমীন, জোরে আমীন
(Related all links):
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
১
عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
২
عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}
যেহেতু কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। তথা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কথা। কোন ব্যক্তির মতামত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ দু’টি হাদীসকে আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ না সহীহ বলেছেন, না জঈফ বলেছেন। তাই গায়রে মুকাল্লিদরা এ দু’টি হাদীসকে না সহীহ বলতে পারবে, না জঈফ বলতে পারবে। এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
- ইসলামি লেখক ও গবেষকইসলামি লেইসলামি লেখক ও গবেষকখক ও গবেষক
Please browse this link for more information: http://zamanhomeo.com/blog/?p=13637
Related All Link:
তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ?
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?
Related All Link:
তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ?
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?
Wednesday, August 14, 2013
জুমআর খুৎবা মাতৃভাষায় দেয়া সুন্নাহ সম্মত?
- আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
জুমআর খুতবা অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুতবা প্রদান করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পরবর্তীতে কোন সাহাবী থেকেই প্রমাণিত নয়।
নবীজী সাঃ এর মৃত্যুকালের শেষ সময়ে আরবের বাহিরের অনেক অনারবী মুসলমানই মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তো। কিন্তু কোনদিনও কোন জুমআর খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি।
সাহাবায়ে কেরামের জমানায় এর কোন নজীর পাওয়া যায় না। হযরত উমর রাঃ এর জমানায় অনারবী মানুষে ভরে গিয়েছিল মদীনা। কিন্তু কোনদিন মসজিদে নববীতে জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া হয়েছে বা দোভাষী দিয়ে অন্য ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।
সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন। সেসব রাষ্ট্রে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু অনারবী রাষ্ট্রে এসে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বা তাদের আরবী খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে জুমআর সময় শুনানো হয়েছে এর কোন নজীর নেই।
যে কাজ রাসূল সাঃ করেননি, বা পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম করেননি। সে কাজ দ্বীন হিসেবে করা সুনিশ্চিতভাবেই বিদআত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। এটি পরিত্যাজ্য।
নামাযের কিরাত যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া বিদআত। ঠিক তেমনি জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দেয়া বিদআত।
যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল চান। তাহলেই দেখবেন, দলীল নয় মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।
সুতরাং এ বিদআতি কাজ থেকে সকলেরই বিরত থাকতে হবে।
হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-২৬৯৭}
একটি মনগড়া কিয়াসের জবাব
যারা রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে নিজের নফসের পূজা করে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়ে থাকেন, তারা কুরআন ও হাদীস রেখে নিজের অজ্ঞ মস্তিস্ক প্রসূত একটি ভ্রান্ত কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। সেটি হল, তারা বলেন, খুতবা হল একটি বক্তৃতা। আর বক্তৃতা সেই ভাষায়ই দিতে হবে, যে ভাষায় মানুষ বুঝে থাকে।
জবাব
১
খুতবা মানে শুধু বক্তৃতা এটি অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। কুরআন ও হাদীসে জুমআর খুতবাকে শুধু বক্তৃতা সাব্যস্ত করা হয়নি। আর আরবীতে বক্তৃতাকে বলা ‘তাযকীর’ খুতবা বলা হয় না।
কুরআনে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩
মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। [সুরা জুমআ-৯ ]
আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)
হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।
فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر
যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । [সহীহ বুখারী-১/৩০১, হাদীস নং-৮৮১, সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৮৫০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫১]
সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির যেমন অন্য ভাষায় দেয়া হয় না। তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেয়ার বিধান নেই।
২
হাদীসে জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।
عن عمر بن الخطاب أنه قال: إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين
হযরত উমর রাঃ বলেন, জুমু’আর খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৬৭)
অন্যত্র হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত আছে-
عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة
হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৭৪]
যদি খুতবা শুধুই বক্তৃতা হতো, তাহলে এর জন্য সময় নির্ধারিত কেন?
সুতরাং বুঝা গেল, নিছক বক্তৃতার নাম খুতবা নয়। এটি নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই রাকাআত নামাযের স্থলাভিসিক্ত।
তাই নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় পড়া যাবে না।
৩
খুতবা সহীহ হওয়ার জন্য শুধু পাঠ করা শর্ত। কেউ শোনা জরুরী নয়। এমনকি কয়েকজন বধির কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির সামনে
খুতবা পাঠ করা হলেও জুমু’আ সহীহ হবে। [ফাতাওয়ায়ে শামী, ৩/১৯০, আল-বাহরুর রায়েক, ২/১৫৭
খুতবা যদি ওয়াজ বা বক্তৃতাই হতো, তাহলে বধির বা ঘুমন্ত ব্যক্তির সামনে খুতবা দিলে সহীহ হতো না।
৪
জুমু’আ সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলা হয়েছে। (দুররে মুখতার, ৩/১৯, ফাতহুল কাদীর, ২/৫৫)
খুতবা যদি ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে নামায সহীহ হবার জন্য তাকে শর্ত বলা অযৌক্তিক।
৫
খুতবা দেওয়ার পর খতীব যদি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যান, আর নামায ও খুতবার মাঝে দীর্ঘ সময় ব্যবধান হয়, তাহলে পুনরায় খুতবা দিতে হয়। যদিও শ্রোতা প্রথমবারের ব্যক্তিরাই হোক না কেন। (আলবাহরুর রায়েক, ২/২৫৮]
যদি খুতবা শুধু ভাষণই হতো, তাহলে একই ভাষণ পূর্বের শ্রোতাদের সামনে আবার বলার কোনোই দরকার ছিল না।
৬
খুতবা শ্রবণ করা এবং চুপ থাকা ওয়াজিব। যবানে দরূদ শরীফ পড়া, তাসবীহ পাঠ করা, তাকবীর বলা অথবা সালামের উত্তর দেওয়া অবৈধ। খুতবা যদি শুধু ভাষণই হতো, তাহলে সালামের জবাব দেওয়া বা যিকর-আযকার থেকে নিষেধ করা হতো না।
৭
কোরআন শরীফকে অনেক আয়াতে ওয়াজ বা নসীহত বলা হয়েছে। (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৭, সূরা ছাদ, আয়াত-৮৭, সূরা কলম – ৫ ২, সূরা তাকবীর , আয়াত-২৭)
ফজরের আযানে الصلاة خير من النوم না বলে ‘নামায ঘুম হতে উত্তম’ বলা উচিত।
কারণ, শ্রোতারা আরবী ভাষায় এ সমস্ত আহ্বান বুঝতে পারে না। অথচ এমন কথা কেউ বলে না।
সুতরাং বুঝা গেল যে, খুতবাকে শুধুই ভাষণ-বক্তৃতা বলা একটি মনগড়া দুর্বল যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার কোন যৌক্তিক ভিত্তিই নেই।
নবীজী আরবী ভাষায় নয় বরং মাতৃভাষায় খুতবা দিয়েছেন?
এমন উদ্ভট যুক্তিও অনেকে দিয়ে থাকেন। আমরা বলি, তাহলে কি বলবেন যে, নবীজী আরবী ভাষায় নয় বরং মাতৃভাষায় কুরআন পড়েছেন, মাতৃভাষায় আজান দিয়েছেন। মাতৃভাষায় ইকামত দিয়েছেন।
তাহলেতো কুরআন তিলাওয়াত এবং নামাযের রুকন আরকান, আজান ও ইকামত সবই সবার নিজস্ব মাতৃভাষায় দিতে হবে। আরবীতে কেন দেয়া হয়?
বুঝা গেল এটি একটি অহেতুক কথা আর কিছুই নয়।
আরবী খুতবার আগের বাংলায় খুতবা কেন বিদআত নয়?
“আরবী খুতবার আগে বাংলায় খুতবা দেয়া” এ বাক্যটি ভুল।
কারণ, আমাদের মসজিদগুলোতে বাংলায় খুতবা দেয়া হয় না, বরং বাংলায় ওয়াজ-নসিহত করা হয়। খুতবাতো আরবীতেই দিতে হয়। দু’ই কারণে আমাদের মসজিদগুলোতে তা করা হয়। যথা-
ক)
জুমআর নামাযের নির্ধারিত সময় হবার এক দেড় ঘন্টা আগে মুসল্লিরা মসজিদে এসে একত্র হন। তখন অনেকেই গল্প গুজব করে গোনাহে লিপ্ত হয়, সেই কারণে খতীব সাহেব উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু আলোচনা করেন। যাতে করে সময়টা কাজে লাগে। যে মুসল্লিরা তা শ্রবণ করেন, তারাও জানেন যে, এটা জুমআর খুতবা নয়। তেমনি যিনি বয়ান করেন, সেই খতীব সাহেবও জানেন এটা জুমআর খুতবা নয়। এটি কেবলি মানুষ নামাযের নির্ধারিত সময়ের আগে একত্রিত হওয়ায় সময়টি কাজে লাগানোর একটি প্রচেষ্টা মাত্র। সুতরাং এটিকে খুতবা ধরে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।
কেউ যদি এটাকে বিদআত বলতে চায়, তাহলে মসজিদে মুসল্লিরা একত্রিত হলে, তাদের উদ্দেশ্য বয়ান করা হারাম হওয়া প্রমাণ করতে হবে।
অথচ এমন কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।
সুতরাং বুঝা গেল, জুমআর মূল খুতবার আগে বাংলায় যে বয়ান করা হয়, তা বিদআত নয়। নিষিদ্ধ নয়। আর সেটি খুতবাও নয়। যদি কেউ আলাদা খুতবা মনে করে, তাহলেই কেবল তা বিদআত হবে। অথচ এমনটি কেউ মনে করে না।
খ)
১
عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلَى جَانِبِ الْمِنْبَرِ فَيَطْرَحُ أَعْقَابَ نَعْلَيْهِ فِي ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ يَقْبِضُ عَلَى رُمَّانَةِ الْمِنْبَرِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَقُولُ فِي بَعْضِ ذَلِكَ: وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فَإِذَا سَمِعَ حَرَكَةَ بَابِ الْمَقْصُورَةِ بِخُرُوجِ الْإِمَامِ جَلَسَ. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ
আসেম রহঃ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমু’আর দিন হযরত আবু হুরায়রা রাঃ জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাঁড়িয়ে মিম্বর ধরে বলতেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাদেক মাসদুক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধ্বংস আরবদের জন্য, ওই ফিতনার কারণে, যা নিকটবর্তী। এরপর যখন ইমাম সাহেবের বের হবার আওয়াজ শুনতেন, তখন তিনি বসে যেতেন। [মুসতাদরাকে হাকেম, ১/১৯০, হাদীস-৩৩৮]
২
عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى خَرَجَ الْإِمَامُ
হযরত আবদুল্লাহ বিন বুছর রাঃ জুমু’আর দিন প্রথমে ওয়াজ করতেন। যখন খতীব খুতবার জন্য আগমন করতেন, তখন তিনি ওয়াজ বন্ধ করতেন। [মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৮৮, হাদীস-১০১২]
গ)
হযরত তামীম দারী রাঃ, হযরত উমর রাঃ ও হযরত উসমান রাঃ-এর যুগে খুতবার পূর্বে ওয়াজ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, ৩১/৩৩১, হাদীস-১৫১৫৭)
সুতরাং বুঝা গেল, আমাদের মসজিদগুলোর আমলটি বিদআত হবার প্রশ্নই উঠে না।
আমাদের একটি প্রশ্ন
যদি খুতবা ভাষণেরই নাম হয়। যা মানুষকে বুঝানোর জন্য স্থানীয় ভাষায় দেয়া জরুরী হয়ে থাাকে। তাহলে প্রশ্ন হল, যদি এমন স্থান হয়, যেখানে একাধিক ভাষাভাষি মানুষ থাকে। যেমন হজ্বের সময় মক্কায় ও মদীনায়। তখন ইমাম কয় ভাষায় খুতবা দিবেন?
খুতবা অন্য ভাষায় দেয়ার দাবি ইসলামকে খেলনা বস্তু বানানোর ষড়যন্ত্র
আজান, ইকামত, তাকবীর, কুরআন, তিলাওয়াত, জিকির ও খুতবা এ সবই ইসলামের প্রতীক। এর কোনটিরই অন্য ভাষায় পড়ার কোন নজীর রাসূল সাল্লাল্লাম থেকে নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে। এমনকি তাবেয়ী বা তাবেয়ীগণ থেকেও নেই।
তাই এসবকে অনুবাদ করে বলার দাবি করা ইসলামের প্রতীককে পাল্টে ফেলার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানকারী বিদআতি ব্যক্তিদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন।
Source: https://ahlehaqmedia.com
Thursday, August 8, 2013
দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ
ফলে ফীকহের সূক্ষ্ম ব্যাপার সমূহ আমভাবে আলচনার বিষয় না হলেও আলেমগন এ বিষয়ে কলম ধরতে বাধ্য হন। বিভিন্ন লিফলেট, বই, টিভি ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়ে আসা চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে থাকেন সাধ্যমত (ফিতনা এড়িয়ে) । তারই ধারাবাহিকতায় "ঈদের সালাতে ১২ তাকবীররের পক্ষে ১৫২ হাদীস ৬ তাকবীরের হাদীস কথায়?" এ বইয়ের জবাবে পটিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব লিখেন "দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ "। এ বইয়ে তিনি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ভাবে সকল অপব্যাক্ষার জবাব দিয়াছেন। আল্লাহ্ সুবহানাল্লাহতায়ালা আমাদের দীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
[ "দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ" বইটি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে স্কেন করে দিলাম ]
Tuesday, August 6, 2013
রাফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কিছু কথা.............
রাফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কিছু কথা.............
-আবদুস সবুর খান
নিচে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সম্পর্কিত দলীলগুলো পেশ করা হল :---
প্রথম দলীল : নবী স.-এর নামায
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। (প্রমান: তিরমিযী ১;৩৫, সহীহ নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং ১০৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ, প্রকাশকাল- মে, ২০০২)
মুহাদ্দিস আহমদ শাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন-
“ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিজুল হাদীস উপরের হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।”
আল্লামা ইবনুত তুরকামানী (রহ) বলেন,
“এই হাদীসের সকল রাবী সহীহ মুসলিমের রাবী”
(আল-জাওহারুন নাকী : ২/৭৮)
স্মর্তব্য যে, ইমাম তিরমিযী রহ. “সুনান” গ্রন্থে ইবনুল মুবারক রহ. এর যে মন্তব্য উল্লেখ করেছেন তা এই বর্ণনা সম্পর্কে নয়, অন্য আরেকটি বর্ননা সম্পর্কে, যা নিন্মোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে-
‘রসুল স. শুধু প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন।’
এ দুই বর্ণনার মধ্যে প্রভেদ না করায় অনেক আলেম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন কিংবা অন্যকে বিভ্রান্ত করেছেন। (দেখুন : নাসবুর রাযাহ : ১/৩৯৪)
এজন্য সুনানে তিরমিযীর বিভিন্ন নুসখায় দ্বিতীয় বর্ণনাটি ভিন্ন শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইবনুল মুবারকের মন্তব্যও রয়েছে সেখানে। অতএব তার মন্তব্য আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে নয়।
(জামে তিরমিযী, তাহক্বীক আহমদ শাকির ২/৪১)
এখানে মুহাদ্দিস আহমদ শাকিরের পর্যালোচনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি লেখেন-
‘রাফয়ে ইয়াদাইন’ বিষয়ে (একশ্রেনীর মানুষ) জয়ীফ হাদীসকে সহীহ ও সহীহ হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করার প্রয়াস পেয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়ে থাকে।’
দ্বিতীয় দলীল : রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীসের বারণ
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন , নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ দুর্দান্ত ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। (প্রমানঃ ... আবু দাউদ ১;১০৯ নাসায়ী ১;১১৭)”
এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা-পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী স.-এর নিদেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।
তৃতীয় দলীল : হযরত উমর রা.- এর আমল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
‘আমি হযরত ওমর রা.-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।’
ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, ‘হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)
চতুর্থ দলীল : হযরত আলী (রা) এর আমল
“হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না।” (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)
আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।’
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)
পঞ্চম দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর আমল
মুজাহিদ রহ. বলেন-
‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।’
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)
আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)
ষষ্ঠ দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল
আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।’
(জামউল মাসানীদ)
সপ্তম দলীল : খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
‘খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।’
(আছারুস সুনান)
খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ স. তাদের সুন্নাহকেও নিদের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী স.-এর সুন্নাহ।
অষ্টম দলীল : সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-
“হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না’।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।”
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
এ উদ্বৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই একাধিক কর্মধারা ছিল। কেউ নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কিছু স্থানেও রাফয়ে ইয়াদাইন করা উত্তম মনে করতেন। কেউ তা মনে করতেন না। তবে এ বিষয়ে তাদের অভিন্ন কর্মনীতি এই ছিল যে, যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা অন্যদের সম্পর্কে আপত্তি করতেন না।
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা এবং যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করেন না তাদেরকে আপত্তি ও সমালোচনার নিশানা বানানো প্রকারান্তরে সাহাবীদেরই নিন্দা ও সমালোচনা করা।
বলাবাহুল্য, এ শ্রেণীর মানুষ সাহাবায়ে কেরামের নীতি ও পথ থেকে বিচ্যুত।
নবম দলীল : মদীনাবাসী ও রাফয়ে ইয়াদাইন উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন ইমাম মালিক রহ. জন্মগ্রহন করেন ৯৩ হিজরীতে। ইলমের অন্যতম কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর জীবন কেটেছে। সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার তার সামনে ছিল। তিনি শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর কর্মকে বুনিয়াদী বিষয় বলে মনে করতেন।
তাঁর প্রসিদ্ধ সাগরিত আল্লামা ইবনুল কাসিম রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে তাঁর যে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন তা এই-
“ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, “নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য তাকবীরের সময়, নামায়ে ঝুঁকার সময় কিংবা সোজা হওয়ার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করার নিয়ম আমার জানা নাই।”
ইবনুল কাসিম রহ. আরো বলেন,
“ইমাম মলিক নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতিকে (দলীলের বিবেচনায়) দুর্বল মনে করতেন।”
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা)
দশম দলীল : ইবরাহীম নাখায়ী রহ.-এর ফতোয়া
ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন-
“নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না”
(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
সারকথা :
উপরোক্ত দালীলিক আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হচ্ছে তা নিন্মরূপ:
১. নবী স.-এর শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্বলিত হাদীস থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম।
২. রাসূলুল্লাহ স. স্ববাস-প্রবাসের সার্বক্ষণিক সহচর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী স. নামাযের শুরুতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।
৩. হযরত জাবির রা.-এর হাদীস থেকে জানা যায়, স্বয়ং নবী স. নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে নিষেধ করেছিলেন।
৪. দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা. এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে যে, তাদের কাছেও রাফয়ে ইয়াদাইন না করাই অধিক শুদ্ধ ও অগ্রগণ্য। আর এ সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীদের দ্বিমত বর্ণিত না হওয়া থেকে প্রমান হয় যে, অধিকাংশ সাহাবী এ নিয়ম অনুসরণ করতেন।
৫. খুলাফায়ে রাশেদীন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোথাও রাফয়ে ইয়াদাইন করেছেন এমন প্রমান নেই।
৬. নবী স.-এর পুণ্যযুগের অব্যবহিত পরেই ছিল খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। তাদের রাফয়ে ইয়াদাইন না করা প্রমান করে যে, তাদের মতেও নামাযে রাফফে ইয়াদাইন না করাই ছিল হুজুর স.-এর সর্বশেষ আমল।
৭. নামাযের ভিতরে রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের যুগেও একাধিক নিয়ম ছিল। তবে দলীল-প্রমানের আলোকে তাদের নিয়মই অগ্রগণ্য যারা রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম মনে করতেন।
৮. সহীহ সনদে এসেছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। তিনি রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গ ও তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন।
অতএব রাফয়ে ইয়াদাইন করণীয় প্রমানের জন্য আবদুল্লাহ ইবনে উপর রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সূত্র বর্ণিত রেওয়ায়েত উপস্থাপন করা উচিত নয়।
আল্লাহ সুবানুহুতা’য়ালা আমার কুরআন ও হাদীস মোতাবেক সহী আমল করার
এবং যারা বিভ্রান্তমূলক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের বিভ্রান্তির হাতে থেকে তাদের এবং আমাদের বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমীন।
সহায়ক গ্রন্থ :
নবীজির নামায
ড. শাইখ মুহাম্মদ ইলিয়াস ফয়সাল
মদীনা মুনাওয়ারাহ