Thursday, September 19, 2013

সমাজে যেসব মাসয়ালা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করা হচ্ছে সেসবের শরয়ী মর্যাদা কি? ব্লগারের মন্তব্য এবং ডা. ইসরার আহমদ

ইখতেলাফী ফুরুয়ী মাসয়ালা

লিখেছেন:   আবদুস সবুর খান 


আজকাল দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন এখতেলাফি মাসয়ালার ব্যাপারে খুব বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। কিন্তু এই সকল ব্যাপারে সলফে সালেহীনদের কি মত . . .
এই সব ইখতেলাফী ফুরুয়ী মাসয়ালার বিভিন্ন মতের ব্যাপারে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রঃ) বলেছেনঃ

وَقَاعِدَتُنَا فِي هَذَا الْبَابِ أَصَحُّ الْقَوَاعِدِ أَنَّ جَمِيعَ صِفَاتِ الْعِبَادَاتِ مِنْ الْأَقْوَالِ وَالْأَفْعَالِ إذَا كَانَتْ مَأْثُورَةً أَثَرًا يَصِحُّ التَّمَسُّكُ بِهِ لَمْ يُكْرَهْ شَيْءٌ مِنْ ذَلِكَ بَلْ يُشْرَعُ ذَلِكَ كُلُّهُ كَمَا قُلْنَا فِي أَنْوَاعِ صَلَاةِ الْخَوْفِ وَفِي نَوْعَيْ الْأَذَانِ التَّرْجِيعِ وَتَرْكِهِ وَنَوْعَيْ الْإِقَامَةِ شَفْعِهَا وَإِفْرَادِهَا وَكَمَا قُلْنَا فِي أَنْوَاعِ التَّشَهُّدَاتِ وَأَنْوَاعِ الِاسْتِفْتَاحَاتِ وَأَنْوَاعِ الِاسْتِعَاذَاتِ وَأَنْوَاعِ الْقِرَاءَاتِ وَأَنْوَاعِ تَكْبِيرَاتِ الْعِيدِ الزَّوَائِدِ وَأَنْوَاعِ صَلَاةِ الْجِنَازَةِ وَسُجُودِ السَّهْوِ وَالْقُنُوتِ قَبْلَ الرُّكُوعِ وَبَعْدَهُ وَالتَّحْمِيدِ بِإِثْبَاتِ الْوَاوِ وَحَذْفِهَا وَغَيْرِ ذَلِكَ لَكِنْ قَدْ يُسْتَحَبُّ بَعْضُ هَذِهِ الْمَأْثُورَاتِ وَيُفَضَّلُ عَلَى بَعْضٍ إذَا قَامَ دَلِيلٌ يُوجِبُ التَّفْضِيلَ وَلَا يُكْرَهُ الْآخَرُ .
“এ বিষয়ে আমাদের নীতি, আর এটাই বিশুদ্ধতম নীতি, এই যে, ইবাদতের পদ্ধতির বিষয়ে (যেসব ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে তাতে) যে পদ্ধতি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য আছার রয়েছে তা মাকরূহ হবে না; বরং তা হবে শরীয়াত সম্মত। সালাতুল খওফের বিভিন্ন পদ্ধতি, আযানের দুই নিয়ম : তারজীযুক্ত বা তারজীবিহীন, ইকামতের দুই নিয়ম : বাক্যগুলো দুইবার করে বলা কিংবা একবার করে, তাশাহহুদ, ছানা, আউযু এর বিভিন্ন পাঠ, কুরআনের বিভিন্ন কিরাআত, এই সবগুলো এই নীতিরই অন্তর্ভূক্ত। এভাবে ঈদের নামাযের অতিরিক্ত তাকবীর-সংখ্যা (ছয় তাকবীর বা বারো তাকবীর), জানাযার নামাযের বিভিন্ন নিয়ম, সাহু সিজদার বিভিন্ন নিয়ম, কুনুত পাঠ, রুকুর পরে বা পূর্বে, রাব্বানালাকাল হামদ, ওয়াসহ অথবা ওয়া ছাড়া, এই সবগুলোই শরীয়াতসম্মত। কোনো পদ্ধতি কখনো উত্তম হতে পারে কিন্তু অন্যটি মাকরূহ নয়”। (মাজমূউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ২৪/২৪২-২৪৩; আল-ফাতাওয়া আল কুবরা ১/১৪০)

ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) যাদুল মাআদ গ্রন্থে' ফজরের সালাতে কুনুত পড়া প্রসঙ্গে বলেছেনঃ

وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه وكالخلاف في أنواع

التشهدات وأنواع الأذان والإقامة وأنواع النسك من الإفراد والقران والتمتع
“এটা ওইসব মতভেদের অন্তর্ভূক্ত যাতে কোনো পক্ষই নিন্দা ও ভর্ৎসনার পাত্র নন। এটা ঠিক তেমনই যেমন সালাতে রাফয়ে ইয়াদাইন করা বা না করা, তদ্রূপ আত্তাহিয়্যাতুর বিভিন্ন পাঠ, আযান-ইকামাতের বিভিন্ন ধরন, হজ্বের বিভিন্ন প্রকার - ইফরাদ, কিরান, তামাত্তু বিষয়ে মতভেদের মতোই”। (যাদুল মায়াদ, ১/২৫৬)

দেখা যাচ্ছে, এই দুই সম্মানিত ইমামের (রঃ) মতে আমাদের সমাজে বর্তমানে যে সকল ফুরুয়ী ইখতিলাফী মাসয়ালা নিয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার বেশীরভাগকেই তাঁরা মুস্তাহাব পর্যায়ের বলছেন। যেমনঃ
- রাফে ইয়াদাইন করা বা না করা।
- ইকামাতের কথাগুলো দুইবার বনাম একবার বলা।
- ঈদের নামাজের ৬ তাকবীর বনাম ১২ তাকবীর।
- সিজদা সাহুর বিভিন্ন নিয়ম।
- দুয়া কুনুত রুকুর আগে বনাম রুকুর পরে। ইত্যাদি।

অর্থাৎ এগুলো করলে কিংবা না করলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না। নামাজ পুরোপুরিই আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এসব বেশীরভাগ মাসয়ালায় এক ইমামের মতে এক পদ্ধতি উত্তম এবং অন্য ইমামের মতে অপর কোন পদ্ধতি উত্তম।

Source: http://www.bdtoday.net

উপরের আলোচনার আলোকে নীচের বর্ণনা গভীরভাবে লক্ষ্য করুন

ব্লগারের মন্তব্যঃ
মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল নিয়ে জেনে হোক, না জেনে হোক শয়তানী  এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে এক শ্রেণীর মানুষ মুসলিম সমাজে ব্যাপক বিভেদ সৃষ্টি করছে। তাদের নামাজই একমাত্র রাছুলের নামাজ। অন্যদের নামাজ রাছুলের নামাজ নয়, প্রচলিত নামাজ বলছে। এমনকি কেউ কেউ গাঁজাখুরী নামাজও বলছে। এই ধরণের ধর্মীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও উগ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। এই ভ্রান্তি, ফেতনা-ফ্যাসাদ দূর করা প্রয়োজন। 

আহলে হাদীস/সালাফীদের সম্পর্কে পিচ টিভি'র আলোচক ডা. ইসরার আহমদের দৃষ্টিভঙ্গি:

সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ) ও হানাফী মাযহাব

সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী (রহঃ) ও হানাফী মাযহাব


সাবেক আমিরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আজম বলেন, “মাওলানা মাওদুদী হানাফী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। জামায়াতের মধ্যে আহলে হাদীসের লোকও রয়েছে” (ইকামাতে দ্বীন, জামায়াতে ইসলামী ও মাওলানা মাওদূদী(রহ:) অধ্যায়)। এছাড়া কোরআন ও সহীহ হাদীসের ভিত্তিতে ইমাম আবু হানীফা (রহ:) মাসয়ালা নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন: ইযা ছোয়াহ্হাল হাদীছু ফাহুয়া মাযহাবী অর্থাৎ “সহীহ হাদীসই আমার মাযহাব হিসাবে গণ্য”(বিরুদ্ধবাদীরা একথাকে উল্টো অর্থে গ্রহণ করে মিথ্যাচার করেন)। ইমাম আবু হানীফা (রহ:) নিজে তাবেয়ী ছিলেন ( তিনি ৮০হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং সর্বশেষ সাহাবী ইন্তেকাল করেন ১১০ হিজরীতে)। আর তিনি মতান্তরে ৩৬/৪০জন তাবেয়ীর দ্বারা  টীম গঠন করে এদের মাধ্যমে মাসয়ালা নির্ধারণ করতেন। অতএব কোরআন-হাদীস অনুসরণের ক্ষেত্রে হানাফী মাযহাবই অধিকতর নির্ভরযোগ্য।  এছাড়া বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে। অতএব অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও সহীহ রাস্তা পরিত্যাগ করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বৃহত্তর জনগণ থেকে বিাচ্ছন্ন করার ভ্রান্ত তৎপরতা থেকে বিরত থাকা উচিত।

Related Link:
 ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তাবেয়ী ছিলেন। 
ইমাম আবু হানীফা রাহ. হাফিযুল হাদীসও ছিলেন : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর 
হাদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহ.) 


আল্লামা মওদুদী (রাহঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তি প্রশ্নের সুরে বলেন, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তো একটি পদ্ধতিতেই নামায আদায় করেছেন। কিন্তু লোকেরা যে বিভিন্ন পদ্ধতিতে নামায পড়ছে, ইসলামে এর স্থান কোথায়? আমি জানতে চাই কোন ফেরকা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পদ্ধতিতে নামায পড়ছে? আপনি কোন পদ্ধতিতে নামায পড়েন?
জবাবে আল্লামা মওদুদী রাহঃ বলেন, আহলে হাদীস, হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলীগণ যেসব পদ্ধতিতে নামায পড়েন, তার সবগুলোই নবী (সাঃ) থেকে প্রমাণিত। এ জন্য তাদের কোনো একটি দলের শ্রেষ্ঠ আলেমগণ কখনো এ কথা বলেনি যে, তাদের পদ্ধতি ছাড়া অন্য পদ্ধতিতে যারা নামায পড়ে তাদের নামায হয় না। এ ধরণের কথা বলা তো কেবল অজ্ঞ লোকদের কাজ।.... আমি নিজে হানাফী পদ্ধতিতে নামায পড়ি। কিন্তু আহলে হাদীস, হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী সবার নামাযকে সহীহ ও সঠিক মনে করি। এদের সবার পিছনে আমি নামায পড়ে থাকি। (রাসায়েল ও মাসায়েল, পৃঃ ২/২৪০)


Wednesday, September 18, 2013

মাযহাব ও হানাফী মাযহাব: অভিযোগের জবাব ও অন্যান্য


মুফতী মিজানুর রহমান সাইয়েদের  আলোচনার অংশবিশেষ



নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?




ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সুরা ফাতিহা পড়া আর না পড়া




মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পড়বে না (Trailer) - শায়খ গোলামুর রহমান


আস্তে আমীন, জোরে আমীন




                          
                          নামাযে পা ফাঁকা করে দাড়ানোর বিধান কি?



লা-মাযহাবীদের নানা বিভক্তি নিয়ে জাকির নায়েকসহ অনেকে। উম্মাহ’র অনৈক্যের কারণ কি ?

Tuesday, September 17, 2013

Is saying Ameen loudly in Sahih Bukhari?




আস্তে আমীন, জোরে আমীন

(Related all links):




রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...

-----------------------------------------------------------

عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}

عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة

হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন। [তারীখে জুরজান-২৭}

যেহেতু কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। তথা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কথা। কোন ব্যক্তির মতামত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ দু’টি হাদীসকে আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ না সহীহ বলেছেন, না জঈফ বলেছেন। তাই গায়রে মুকাল্লিদরা এ দু’টি হাদীসকে না সহীহ বলতে পারবে, না জঈফ বলতে পারবে। এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।

- ইসলামি লেখক ও গবেষকইসলামি লেইসলামি লেখক ও গবেষকখক ও গবেষক


























Please browse this link for more information: http://zamanhomeo.com/blog/?p=13637


Related All Link: 
তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ? 
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?


তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?






Related All Link: 
তারাবিহের নামাজ কেন ২০ রাকাত ? 
রাসুল সাঃ বিশ রাকাআত তারাবীহ ও তিন রাকাআত বিতর পড়তেন সহিহ দলিল দ্বারা প্রমানিত...
তারাবিহের নামাজ ৮ রাকাত লয় কেন?


Wednesday, August 14, 2013

জুমআর খুৎবা মাতৃভাষায় দেয়া সুন্নাহ সম্মত?

- আবূ মুয়াবিয়া লুৎফুর রহমান ফরায়েজী

জুমআর খুতবা অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত।  আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় খুতবা প্রদান করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পরবর্তীতে কোন সাহাবী থেকেই প্রমাণিত নয়।

নবীজী সাঃ এর মৃত্যুকালের শেষ সময়ে আরবের বাহিরের অনেক অনারবী মুসলমানই মসজিদে নববীতে এসে নামায পড়তো। কিন্তু কোনদিনও কোন জুমআর খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করা হয়নি।

সাহাবায়ে কেরামের জমানায় এর কোন নজীর পাওয়া যায় না।  হযরত উমর রাঃ এর জমানায় অনারবী মানুষে ভরে গিয়েছিল মদীনা।  কিন্তু কোনদিন মসজিদে নববীতে জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় দেয়া হয়েছে বা দোভাষী দিয়ে অন্য ভাষায় তা অনুবাদ করা হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

সেই সাথে সাহাবায়ে কেরাম বিভিন্ন দেশে দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে গেছেন।  সেসব রাষ্ট্রে ইসলামের আলো ছড়িয়েছেন। কিন্তু অনারবী রাষ্ট্রে এসে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়েছেন বা তাদের আরবী খুতবা অন্য ভাষায় অনুবাদ করে জুমআর সময় শুনানো হয়েছে এর কোন নজীর নেই।

যে কাজ রাসূল সাঃ করেননি, বা পরবর্তী সাহাবায়ে কেরাম করেননি। সে কাজ দ্বীন হিসেবে করা সুনিশ্চিতভাবেই বিদআত। এতে কোন সন্দেহ নেই।  তাই জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় প্রদান করা বিদআত। এটি পরিত্যাজ্য।

নামাযের কিরাত যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া বিদআত। ঠিক তেমনি জুমআর খুতবা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দেয়া বিদআত।

যারা এ বিদআতি কাজটি করে যাচ্ছেন, তাদের কাছে এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এবং সাহাবায়ে কেরাম থেকে সহীহ হাদীসের দলীল চান। তাহলেই দেখবেন, দলীল নয় মনের খাহেশাতই হচ্ছে তাদের দলীল।

সুতরাং এ বিদআতি কাজ থেকে সকলেরই বিরত থাকতে হবে।

হযরত ইরবাস বিন সারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ يَرَى بَعْدِي اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

তোমাদের মাঝে আমার পর জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের উপর আমার এবং আমার হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আঁকড়ে ধরবে। সেটিকে মাড়ির দাত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭১৪৪}

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে আবিস্কার করে তা পরিত্যাজ্য। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-২৬৯৭}

একটি মনগড়া কিয়াসের জবাব

যারা রাসূল সাঃ ও সাহাবায়ে কেরামের পদ্ধতিকে বাদ দিয়ে নিজের নফসের পূজা করে আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দিয়ে থাকেন, তারা কুরআন ও হাদীস রেখে নিজের অজ্ঞ মস্তিস্ক প্রসূত একটি ভ্রান্ত কিয়াসের আশ্রয় নিয়ে থাকেন। সেটি হল, তারা বলেন, খুতবা হল একটি বক্তৃতা। আর বক্তৃতা সেই ভাষায়ই দিতে হবে, যে ভাষায় মানুষ বুঝে থাকে।

জবাব

খুতবা মানে শুধু বক্তৃতা এটি অজ্ঞতাসূচক বক্তব্য। কুরআন ও হাদীসে জুমআর খুতবাকে শুধু বক্তৃতা সাব্যস্ত করা হয়নি। আর আরবীতে বক্তৃতাকে বলা ‘তাযকীর’ খুতবা বলা হয় না।

কুরআনে খুতবাকে জিকির বলা হয়েছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَىٰ ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦٢:٩

মুমিনগণ, জুমআর দিনে যখন নামাযের আযান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের পানে ত্বরা কর এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। [সুরা জুমআ-৯ ]

আই আয়াতের মধ্যকার যিকরুল্লাহ দ্বারা প্রায় সকল মুফাসসিরদের মতে খুতবা উদ্দেশ্য । (তাফসিরে রাযি ১/৪৪৬, তাফসিরে রুহুল মাআনি ২৮/১০২, তাফসিরে ইবনে আব্বাস রাঃ)

হাদিসেও খুতবাকে যিকির হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

فإذا خرج الإمام حضرت الملائكة يستمعون الذكر

যখন ইমাম খুতবা দিতে বের হন তখন ফেরেশতারা এসে যিকির শুনে অর্থাৎ খুতবা শোনে । [সহীহ বুখারী-১/৩০১, হাদীস নং-৮৮১, সহীহ মুসলিম হাদিস নং-৮৫০, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫১]

সুতরাং কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির যেমন অন্য ভাষায় দেয়া হয় না। তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেয়ার বিধান নেই।

হাদীসে জুমার খুতবাকে দুই রাকাত নামজের স্থলাবিসিক্ত করা হয়েছে ।

عن عمر بن الخطاب أنه قال: إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين

হযরত উমর রাঃ বলেন, জুমু’আর খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৬৭)

অন্যত্র হযরত উমর রাঃ থেকে বর্ণিত আছে-

عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة

হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, হাদীস-৫৩৭৪]

যদি খুতবা শুধুই বক্তৃতা হতো, তাহলে এর জন্য সময় নির্ধারিত কেন?

সুতরাং বুঝা গেল, নিছক বক্তৃতার নাম খুতবা নয়। এটি নামাযের মতই গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই রাকাআত নামাযের স্থলাভিসিক্ত।

তাই নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় পড়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় পড়া যাবে না।

খুতবা সহীহ হওয়ার জন্য শুধু পাঠ করা শর্ত। কেউ শোনা জরুরী নয়। এমনকি কয়েকজন বধির কিংবা ঘুমন্ত ব্যক্তির সামনে

খুতবা পাঠ করা হলেও জুমু’আ সহীহ হবে। [ফাতাওয়ায়ে শামী, ৩/১৯০, আল-বাহরুর রায়েক, ২/১৫৭

খুতবা যদি ওয়াজ বা বক্তৃতাই হতো, তাহলে বধির বা ঘুমন্ত ব্যক্তির সামনে খুতবা দিলে সহীহ হতো না।

জুমু’আ সহীহ হওয়ার জন্য খুতবাকে শর্ত বলা হয়েছে। (দুররে মুখতার, ৩/১৯, ফাতহুল কাদীর, ২/৫৫)

খুতবা যদি ওয়াজ বা বক্তৃতা হতো, তাহলে নামায সহীহ হবার জন্য তাকে শর্ত বলা অযৌক্তিক।

খুতবা দেওয়ার পর খতীব যদি অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত হয়ে যান, আর নামায ও খুতবার মাঝে দীর্ঘ সময় ব্যবধান হয়, তাহলে পুনরায় খুতবা দিতে হয়। যদিও শ্রোতা প্রথমবারের ব্যক্তিরাই হোক না কেন। (আলবাহরুর রায়েক, ২/২৫৮]

যদি খুতবা শুধু ভাষণই হতো, তাহলে একই ভাষণ পূর্বের শ্রোতাদের সামনে আবার বলার কোনোই দরকার ছিল না।

খুতবা শ্রবণ করা এবং চুপ থাকা ওয়াজিব। যবানে দরূদ শরীফ পড়া, তাসবীহ পাঠ করা, তাকবীর বলা অথবা সালামের উত্তর দেওয়া অবৈধ। খুতবা যদি শুধু ভাষণই হতো, তাহলে সালামের জবাব দেওয়া বা যিকর-আযকার থেকে নিষেধ করা হতো না।

কোরআন শরীফকে অনেক আয়াতে ওয়াজ বা নসীহত বলা হয়েছে। (সূরা ইউনুস, আয়াত-৫৭, সূরা ছাদ, আয়াত-৮৭, সূরা কলম – ৫ ২, সূরা তাকবীর , আয়াত-২৭)

তাহলে খুতবার মতো কোরআনকেও নামাযের মধ্যে স্থানীয় ভাষায় পাঠ করা জায়েয হওয়া উচিত।
কারণ, আরবী তেলাওয়াত শ্রোতারা অনেকেই বোঝে না। কোনো সুস্থ মস্তিস্কসম্পন্ন ব্যক্তি কি তা বৈধ বলবে? তেমনিভাবে আযানের মধ্যে حى على الصلاة না বলে ‘নামাযের দিকে আসো’ বলা উচিত।

ফজরের আযানে الصلاة خير من النوم না বলে ‘নামায ঘুম হতে উত্তম’ বলা উচিত।

কারণ, শ্রোতারা আরবী ভাষায় এ সমস্ত আহ্বান বুঝতে পারে না। অথচ এমন কথা কেউ বলে না।

সুতরাং বুঝা গেল যে, খুতবাকে শুধুই ভাষণ-বক্তৃতা বলা একটি মনগড়া দুর্বল যুক্তি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার কোন যৌক্তিক ভিত্তিই নেই।

নবীজী আরবী ভাষায় নয় বরং মাতৃভাষায় খুতবা দিয়েছেন?

এমন উদ্ভট যুক্তিও অনেকে দিয়ে থাকেন। আমরা বলি, তাহলে কি বলবেন যে, নবীজী আরবী ভাষায় নয় বরং মাতৃভাষায় কুরআন পড়েছেন, মাতৃভাষায় আজান দিয়েছেন। মাতৃভাষায় ইকামত দিয়েছেন।

তাহলেতো কুরআন তিলাওয়াত এবং নামাযের রুকন আরকান, আজান ও ইকামত সবই সবার নিজস্ব মাতৃভাষায় দিতে হবে। আরবীতে কেন দেয়া হয়?

বুঝা গেল এটি একটি অহেতুক কথা আর কিছুই নয়।

আরবী খুতবার আগের বাংলায় খুতবা কেন বিদআত নয়?

“আরবী খুতবার আগে বাংলায় খুতবা দেয়া” এ বাক্যটি ভুল।

কারণ, আমাদের মসজিদগুলোতে বাংলায় খুতবা দেয়া হয় না, বরং বাংলায় ওয়াজ-নসিহত করা হয়। খুতবাতো আরবীতেই দিতে হয়। দু’ই কারণে আমাদের মসজিদগুলোতে তা করা হয়। যথা-

ক)

জুমআর নামাযের নির্ধারিত সময় হবার এক দেড় ঘন্টা আগে মুসল্লিরা মসজিদে এসে একত্র হন। তখন অনেকেই গল্প গুজব করে গোনাহে লিপ্ত হয়, সেই কারণে খতীব সাহেব উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু আলোচনা করেন। যাতে করে সময়টা কাজে লাগে। যে মুসল্লিরা তা শ্রবণ করেন, তারাও জানেন যে, এটা জুমআর খুতবা নয়। তেমনি যিনি বয়ান করেন, সেই খতীব সাহেবও জানেন এটা জুমআর খুতবা নয়। এটি কেবলি মানুষ নামাযের নির্ধারিত সময়ের আগে একত্রিত হওয়ায় সময়টি কাজে লাগানোর একটি প্রচেষ্টা মাত্র। সুতরাং এটিকে খুতবা ধরে বিদআত বলার কোন সুযোগ নেই।

কেউ যদি এটাকে বিদআত বলতে চায়, তাহলে মসজিদে মুসল্লিরা একত্রিত হলে, তাদের উদ্দেশ্য বয়ান করা হারাম হওয়া প্রমাণ করতে হবে।

অথচ এমন কোন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।

সুতরাং বুঝা গেল, জুমআর মূল খুতবার আগে বাংলায় যে বয়ান করা হয়, তা বিদআত নয়। নিষিদ্ধ নয়। আর সেটি খুতবাও নয়। যদি কেউ আলাদা খুতবা মনে করে, তাহলেই কেবল তা বিদআত হবে। অথচ এমনটি কেউ মনে করে না।

খ)

জুমআর মূল খুতবার আগে বয়ান করা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে প্রমাণিত। আমরা সাহাবায়ে কেরাম রাঃ এর অনুসরণে তা করে থাকি।
যেমন-

عَاصِمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يَقُومُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِلَى جَانِبِ الْمِنْبَرِ فَيَطْرَحُ أَعْقَابَ نَعْلَيْهِ فِي ذِرَاعَيْهِ ثُمَّ يَقْبِضُ عَلَى رُمَّانَةِ الْمِنْبَرِ، يَقُولُ: قَالَ أَبُو الْقَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَالَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَقُولُ فِي بَعْضِ ذَلِكَ: وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ فَإِذَا سَمِعَ حَرَكَةَ بَابِ الْمَقْصُورَةِ بِخُرُوجِ الْإِمَامِ جَلَسَ. هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ

আসেম রহঃ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, জুমু’আর দিন হযরত আবু হুরায়রা রাঃ জুতা খুলে মিম্বরের পাশে দাঁড়িয়ে মিম্বর ধরে বলতেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাদেক মাসদুক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ধ্বংস আরবদের জন্য, ওই ফিতনার কারণে, যা নিকটবর্তী। এরপর যখন ইমাম সাহেবের বের হবার আওয়াজ শুনতেন, তখন তিনি বসে যেতেন। [মুসতাদরাকে হাকেম, ১/১৯০, হাদীস-৩৩৮]

عَنْ أَبِي الزَّاهِرِيَّةِ، قَالَ: كُنْتُ جَالِسًا مَعَ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُسْرٍ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى خَرَجَ الْإِمَامُ

হযরত আবদুল্লাহ বিন বুছর রাঃ জুমু’আর দিন প্রথমে ওয়াজ করতেন। যখন খতীব খুতবার জন্য আগমন করতেন, তখন তিনি ওয়াজ বন্ধ করতেন। [মুসতাদরাকে হাকেম, ১/২৮৮, হাদীস-১০১২]

গ)

হযরত তামীম দারী রাঃ, হযরত উমর রাঃ ও হযরত উসমান রাঃ-এর যুগে খুতবার পূর্বে ওয়াজ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, ৩১/৩৩১, হাদীস-১৫১৫৭)

সুতরাং বুঝা গেল, আমাদের মসজিদগুলোর আমলটি বিদআত হবার প্রশ্নই উঠে না।

আমাদের একটি প্রশ্ন

যদি খুতবা ভাষণেরই নাম হয়। যা মানুষকে বুঝানোর জন্য স্থানীয় ভাষায় দেয়া জরুরী হয়ে থাাকে। তাহলে প্রশ্ন হল, যদি এমন স্থান হয়, যেখানে একাধিক ভাষাভাষি মানুষ থাকে। যেমন হজ্বের সময় মক্কায় ও মদীনায়। তখন ইমাম কয় ভাষায় খুতবা দিবেন?

খুতবা অন্য ভাষায় দেয়ার দাবি ইসলামকে খেলনা বস্তু বানানোর ষড়যন্ত্র

আজান, ইকামত, তাকবীর, কুরআন, তিলাওয়াত, জিকির ও খুতবা এ সবই ইসলামের প্রতীক। এর কোনটিরই অন্য ভাষায় পড়ার কোন নজীর রাসূল সাল্লাল্লাম থেকে নেই। নেই সাহাবায়ে কেরাম রাঃ থেকে। এমনকি তাবেয়ী বা তাবেয়ীগণ থেকেও নেই।

তাই এসবকে অনুবাদ করে বলার দাবি করা ইসলামের প্রতীককে পাল্টে ফেলার ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়। আল্লাহ তাআলা আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা প্রদানকারী বিদআতি ব্যক্তিদের থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমীন।

Source: https://ahlehaqmedia.com

Thursday, August 8, 2013

দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ

দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ 

কিছুদিন আগে "ঈদের সালাতে ১২ তাকবীররের পক্ষে ১৫২ হাদীস ৬ তাকবীরের হাদীস কথায়?" শিরনামে একটি বই প্রকাশিত হয়। যার ভাষা ও বক্তব্য ছিল উস্কানিমূলক। ফলে সাধারণের মধ্যে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। আলেমগণের কাছে  এ ব্যাপারে একের পর এক প্রশ্ন আসতে থাকে, সত্যই কি ৬ তাকবীরের কোন হাদিস নেই? তাহলে আমরা মানছি কেন?
ফলে ফীকহের সূক্ষ্ম ব্যাপার সমূহ আমভাবে আলচনার বিষয় না হলেও আলেমগন এ বিষয়ে কলম ধরতে বাধ্য হন। বিভিন্ন লিফলেট, বই, টিভি ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে এ বিষয়ে আসা চ্যালেঞ্জের জবাব দিতে থাকেন সাধ্যমত (ফিতনা এড়িয়ে) । তারই ধারাবাহিকতায় "ঈদের সালাতে ১২ তাকবীররের পক্ষে ১৫২ হাদীস ৬ তাকবীরের হাদীস কথায়?" এ বইয়ের জবাবে পটিয়া মাদ্রাসার সিনিয়র মুফতি হাফেজ আহমদুল্লাহ সাহেব লিখেন "দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ "। এ বইয়ে তিনি অত্যন্ত যুক্তিপূর্ণ ভাবে সকল অপব্যাক্ষার জবাব দিয়াছেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাল্লাহতায়ালা আমাদের দীনের সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
[ "দোয়া ও মুনাজাত এবং ঈদের নামাজে ছয় তাকবীরের প্রমাণ"  বইটি সকলের কাছে পৌঁছে দিতে স্কেন করে দিলাম ]
Download now

 এই লিংক থেকে ডাউনলোড করতে না পারলে নীচের লিংক থেকে দেখুন: 


                                         ঈদের নামাজের তাকবীর

ঈদের নামাজের তাকবীর কত ?



Tuesday, August 6, 2013

রাফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কিছু কথা.............

রাফয়ে ইয়াদাইন নিয়ে কিছু কথা.............

-আবদুস সবুর খান

 



আজকাল কিছু ভাই রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে এমন কিছু কথা ছড়াচ্ছে যা সাধারন মুসলমানদের বিভ্রান্তিতে ফেলছে। কিন্তু তারা (সাধারন মুসলমান) কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান রাখেন না এবং স্বভাবতই তারা অনেকেই বিভ্রান্তির স্বীকার হচ্ছেন। তাই উক্ত বিষয় সম্পর্কে কিছু বলা নিজের ঈমানী দায়িত্ব মনে করছি।
নিচে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সম্পর্কিত দলীলগুলো পেশ করা হল :---

প্রথম দলীল : নবী স.-এর নামায
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন আমি কি তোমাদের কে হুজুর সাঃ এর নামাজ সম্পর্কে অবগতি দেব না? এ কথা বলে তিনি নামাজ পড়ে দেখালেন এবং নামাজে তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার রাফয়ে ইয়াদাইন করলেন। নামাজে আর কোথাও তিনি রফঈ ইয়াদিন করলেন না। (প্রমান: তিরমিযী ১;৩৫, সহীহ নাসায়ী শরীফ, হাদিস নং ১০৬১, প্রকাশনী- ইসঃ ফাউঃ বাংলাদেশ, প্রকাশকাল- মে, ২০০২)

মুহাদ্দিস আহমদ শাকির এ হাদীস সম্পর্কে বলেন-
“ইবনে হাযম ও অন্যান্য হাফিজুল হাদীস উপরের হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।”

আল্লামা ইবনুত তুরকামানী (রহ) বলেন,
“এই হাদীসের সকল রাবী সহীহ মুসলিমের রাবী”
(আল-জাওহারুন নাকী : ২/৭৮)

স্মর্তব্য যে, ইমাম তিরমিযী রহ. “সুনান” গ্রন্থে ইবনুল মুবারক রহ. এর যে মন্তব্য উল্লেখ করেছেন তা এই বর্ণনা সম্পর্কে নয়, অন্য আরেকটি বর্ননা সম্পর্কে, যা নিন্মোক্ত ভাষায় বর্ণিত হয়েছে-
‘রসুল স. শুধু প্রথমবার হাত উঠিয়েছেন।’

এ দুই বর্ণনার মধ্যে প্রভেদ না করায় অনেক আলেম বিভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন কিংবা অন্যকে বিভ্রান্ত করেছেন। (দেখুন : নাসবুর রাযাহ : ১/৩৯৪)

এজন্য সুনানে তিরমিযীর বিভিন্ন নুসখায় দ্বিতীয় বর্ণনাটি ভিন্ন শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করা হয়েছে এবং ইবনুল মুবারকের মন্তব্যও রয়েছে সেখানে। অতএব তার মন্তব্য আলোচ্য হাদীস সম্পর্কে নয়।
(জামে তিরমিযী, তাহক্বীক আহমদ শাকির ২/৪১)

এখানে মুহাদ্দিস আহমদ শাকিরের পর্যালোচনা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি লেখেন-
‘রাফয়ে ইয়াদাইন’ বিষয়ে (একশ্রেনীর মানুষ) জয়ীফ হাদীসকে সহীহ ও সহীহ হাদীসকে জয়ীফ সাব্যস্ত করার প্রয়াস পেয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই নীতি ও ইনসাফ বিসর্জন দিয়ে থাকে।’

দ্বিতীয় দলীল : রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে হাদীসের বারণ
হজরত জাবির ইবনে সামুরাহ রাঃ বলেন , নামাজের মুহুর্তে হুজুর সাঃ আমাদের নিকট আসলেন এবং বললেন, “তোমাদের কি হল যে তোমাদের কে দেখতে পাচ্ছি তোমরা রাফয়ে ইয়াদাইন করছ দুর্দান্ত ঘোড়ার লেজের ন্যায়? নামাজের মধ্যে শান্ত ধীর হও। (প্রমানঃ ... আবু দাউদ ১;১০৯ নাসায়ী ১;১১৭)”

এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ স. স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ীই যেহেতু রফইয়ে ঈয়াদিন স্থিরতা-পরিপন্থী তাই আমাদের কর্তব্য হল, নবী স.-এর নিদেশমতো স্থিরতার সঙ্গে নামায পড়া।

তৃতীয় দলীল : হযরত উমর রা.- এর আমল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
‘আমি হযরত ওমর রা.-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।’ (তাহাবী: ১/১৬৪)

আল্লামা যায়লায়ী রহ. এই হাদীসকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।’

ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, ‘হযরত ওমর রা. এর আমল এবং এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম রা.-এর কোনরূপ বিরোধিতা না থাকায় প্রমাণ করে যে, সেই সঠিক পদ্ধতি এবং এ পদ্ধতির বিরোধিতা করা কারও জন্য উচিত নয়।’
(তাহাবী : ১/১৬৪)

চতুর্থ দলীল : হযরত আলী (রা) এর আমল
“হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না।” (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০)

আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।’
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)

পঞ্চম দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর আমল
মুজাহিদ রহ. বলেন-
‘আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।’
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা. তাহক্বীকৃত নুসখা)

আল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, ‘এ বর্ণনার সনদ সহীহ’
(আল-জাওহারুন নাকী)

ষষ্ঠ দলীল : হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর আমল
আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।’
(জামউল মাসানীদ)

সপ্তম দলীল : খুলাফায়ে রাশেদীন ও রাফয়ে ইয়াদাইন
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা নামাভী রহ. খুলাফায়ে রাশেদীনের কর্মধারা বিষয়ক বর্ণনাগুলো পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে পৌছেছেন যে-
‘খুলাফায়ে রাশেদীন শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন। অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন বলে প্রমান পাওয়া যায় না।’
(আছারুস সুনান)

খুলাফায়ে রাশেদীন হলেন আম্বিয়ায়ে কেরাম আ.-এর পর মানবজাতির মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী। তাঁরা ছিলেন রাসূলুল্লাহর সত্যিকারের অনুসারী। রাসূলুল্লাহ স. তাদের সুন্নাহকেও নিদের সুন্নাহর মতো অনুসরণীয় ঘোষনা করেছেন। কেননা, তাদের সুন্নাহ ছিল নবীর সুন্নাহ থেকেই গৃহীত। তাই তারা যখন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে হাত উঠাতেন না তখন একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের কাছেও নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোন স্থানে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম। আর এটি নবী স.-এর সুন্নাহ।

অষ্টম দলীল : সাহাবায়ে কেরামের কর্মধারা
ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন-
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন।
(জামে তিরমিযী : ১/৩৫)

আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-
“হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না’।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।”
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)

এ উদ্বৃতি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই একাধিক কর্মধারা ছিল। কেউ নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কিছু স্থানেও রাফয়ে ইয়াদাইন করা উত্তম মনে করতেন। কেউ তা মনে করতেন না। তবে এ বিষয়ে তাদের অভিন্ন কর্মনীতি এই ছিল যে, যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা অন্যদের সম্পর্কে আপত্তি করতেন না।

এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা এবং যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করেন না তাদেরকে আপত্তি ও সমালোচনার নিশানা বানানো প্রকারান্তরে সাহাবীদেরই নিন্দা ও সমালোচনা করা।

বলাবাহুল্য, এ শ্রেণীর মানুষ সাহাবায়ে কেরামের নীতি ও পথ থেকে বিচ্যুত।

নবম দলীল : মদীনাবাসী ও রাফয়ে ইয়াদাইন উস্তাযুল মুহাদ্দিসীন ইমাম মালিক রহ. জন্মগ্রহন করেন ৯৩ হিজরীতে। ইলমের অন্যতম কেন্দ্রভূমি মদীনা মুনাওয়ারায় তাঁর জীবন কেটেছে। সাহাবায়ে কেরামের আমল এবং হাদীস শরীফের বিশাল ভান্ডার তার সামনে ছিল। তিনি শরীয়তের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর কর্মকে বুনিয়াদী বিষয় বলে মনে করতেন।
তাঁর প্রসিদ্ধ সাগরিত আল্লামা ইবনুল কাসিম রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে তাঁর যে সিদ্ধান্ত উল্লেখ করেছেন তা এই-
“ইমাম মালিক রহ. বলেছেন, “নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য তাকবীরের সময়, নামায়ে ঝুঁকার সময় কিংবা সোজা হওয়ার সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করার নিয়ম আমার জানা নাই।”

ইবনুল কাসিম রহ. আরো বলেন,
“ইমাম মলিক নামাযের প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে রাফয়ে ইয়াদাইন করার পদ্ধতিকে (দলীলের বিবেচনায়) দুর্বল মনে করতেন।”
(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরা)

দশম দলীল : ইবরাহীম নাখায়ী রহ.-এর ফতোয়া
ইবরাহীম নাখায়ী রহ. বলেন-
“নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না”
(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)

সারকথা :
উপরোক্ত দালীলিক আলোচনা থেকে যে বিষয়গুলো প্রমাণিত হচ্ছে তা নিন্মরূপ:

১. নবী স.-এর শিক্ষা ও নির্দেশনা সম্বলিত হাদীস থেকে একথাই প্রতীয়মান হয় যে, নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম।

২. রাসূলুল্লাহ স. স্ববাস-প্রবাসের সার্বক্ষণিক সহচর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউস রা.-এর সূত্রে বর্ণিত সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, নবী স. নামাযের শুরুতে রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।

৩. হযরত জাবির রা.-এর হাদীস থেকে জানা যায়, স্বয়ং নবী স. নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করতে নিষেধ করেছিলেন।

৪. দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর রা. এবং চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রা. সম্পর্কে বিশুদ্ধ বর্ণনায় রয়েছে যে, তাদের কাছেও রাফয়ে ইয়াদাইন না করাই অধিক শুদ্ধ ও অগ্রগণ্য। আর এ সম্পর্কে অন্যান্য সাহাবীদের দ্বিমত বর্ণিত না হওয়া থেকে প্রমান হয় যে, অধিকাংশ সাহাবী এ নিয়ম অনুসরণ করতেন।

৫. খুলাফায়ে রাশেদীন নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য কোথাও রাফয়ে ইয়াদাইন করেছেন এমন প্রমান নেই।

৬. নবী স.-এর পুণ্যযুগের অব্যবহিত পরেই ছিল খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ। তাদের রাফয়ে ইয়াদাইন না করা প্রমান করে যে, তাদের মতেও নামাযে রাফফে ইয়াদাইন না করাই ছিল হুজুর স.-এর সর্বশেষ আমল।

৭. নামাযের ভিতরে রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের যুগেও একাধিক নিয়ম ছিল। তবে দলীল-প্রমানের আলোকে তাদের নিয়মই অগ্রগণ্য যারা রাফয়ে ইয়াদাইন না করা উত্তম মনে করতেন।

৮. সহীহ সনদে এসেছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. নামাযের সূচনা ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না। তিনি রাফয়ে ইয়াদাইন প্রসঙ্গ ও তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত ছিলেন।

অতএব রাফয়ে ইয়াদাইন করণীয় প্রমানের জন্য আবদুল্লাহ ইবনে উপর রা. ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সূত্র বর্ণিত রেওয়ায়েত উপস্থাপন করা উচিত নয়।
আল্লাহ সুবানুহুতা’য়ালা আমার কুরআন ও হাদীস মোতাবেক সহী আমল করার
এবং যারা বিভ্রান্তমূলক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদের বিভ্রান্তির হাতে থেকে তাদের এবং আমাদের বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমীন।


সহায়ক গ্রন্থ :
নবীজির নামায
ড. শাইখ মুহাম্মদ ইলিয়াস ফয়সাল
মদীনা মুনাওয়ারাহ

Monday, August 5, 2013

Raf'ul Yadain(রাফউল ইয়াদাইন), By Imam Ajir Uddin and Ahmad Abu Sufian (2 Bangla Video)







নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?

নামাযে কিয়াম অবস্থায় কোথায় হাত রাখা সুন্নাত?

-এস এম ফারুক হাসান

 
নামাযে হাত কোথায় রাখা সুন্নাত, এ ব্যপারে ইমামদের মাঝে মতভেদ আছে। ইমাম শাফেয়ির মতে নাভীর উপরে বুকের নিচে হাত রাখা সুন্নাত এবং এটাই তার বিশুদ্বতম মত। ইমাম মালীকের মতে হাত না বেধে ছেড়ে দেয়া সুন্নাত। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের মতে নাভীর উপরে বা নিচে যে কোন এক জায়গায় রাখলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম আবু ইউসূফ, ইয়াম মুহাম্মদ,সুফয়ান সাওরী, ইসহাক ইবনে রাহবিয়াহ এবং আবু ইসহাক মযুরী (শাফেয়ী) এবং অসংখ্যা ফোকায়ে কেরামের মতে নাভীর নিচে হাত বাধা সুন্নাত। (ইলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯১পৃ, মাআরিফুসসুনান ২য় খন্ড ৪৩৬ পৃ)

আমাদের দেশে আহলে হাদিস নামধারি কিছু লোক এ ব্যাপারে অতিরঞ্জিত শুরু করেছে। তারা বলে বুকের উপর হাত বাধা সুন্নত এবং নাভীর নিচে হাত বাধার সবগুলো হাদীস দুর্বল এবং এ ব্যাপারে কোন ছহীহ হাদিস নেই। (ভূমিকা, সালাতে নারী পুরুষের বুকে হাত বাধা)। অথচ নাভীর নিচে হাত বাধা ছহীহ হাদীছ এবং রসূল (সাঃ) এর পবিত্র আমল দ্বারা প্রমাণিত এবং বুকের উপর হাত বাধার দলীল এর চেয়ে নাভীর নিচে হাত বাধার দল অনেক বেশী শক্তিশালী। বিখ্যাত মুহাদ্দিস আবু তৈয়ব মাদানি তিরমিযি শরীফের ব্যাখা গ্রন্থে বলেন চার ইমামের কোন ইমাম বুকের উপর হাত বাধতে বলেননি। বুকের উপর হাত বাধার হাদীস যদি এতই শক্তিশালী হত, তাহলে কোন না কোন ইমাম বুকের উপর হাত বাধা সুন্নাত বলত। (ফাইযুল বারী শরহে বুখারী ১ম খন্ড ৬১৪পৃ,তানজিমুল আসতাত শরহে মিশকাত ৩০১পৃ, মারেফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৬, )
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বুকের উপর হাত রাখাকে মাকরুহ মনে করেন (মাসায়েলে আবু দাউদ লিল ইমাম আহমদ (র) ৪৭-৪৮পৃ)
নিম্নে হাদিসের বিশুদ্ব এবং গ্রহণযোগ্য কিতাব সমুহ হতে নাভীর নিচে হাত বাধার হাদিস সমুহ উল্লেখ করা হল।


১নং দলীলঃ

عن ابي حازم عن سهل بن سعد (رض) قال كان ناس يومرون ان يضع الرجل اليد اليمني علي ذراعه اليسري في الصلاة قال ابو حازم لا أعلمه ألا ينمي ذلك الي النبي صلي الله عليه وسلم

“সাহাবী সাহাল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন মানূষদের কে নামাযে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখতে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আবু হাজিম বলেন সাহাল এই হাদিছ টি রসূল(স) এর থেকে বর্ণনা করতেন। (বুখারী ১ম খন্ড,১০২ পৃ)

উক্ত হাদিছে ডান হাত কে বাম যিরার উপর রাখতে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু হাত কোথায় রাখবে, নাভির উপরে না নাভীর নিচে, সে সম্পর্কে। উক্ত হাদিসে কিছু বলা হয়নি। এখন আমাদের বুঝা দরকার যে আরবী তে “যিরা” শব্দের অর্থ কি? কনুই থেকে মধ্যমা আঙুল পর্যন্ত অংশ কে আরবি তে যিরা বলা হয়।(মিছবাহুল লুগাত,মুজামুল ওয়াসিত,আল মুনযিদ)।
সে হিসাবে উক্ত হাদিসটি কোনভাবেই হানাফি মাযহাবের বিরোধী নয়, কারণ আমরা নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের কব্জির উপর রাখি এবং কবজি নিংসন্দেহে “যিরা” এর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং কোন ভাবেই উক্ত হাদিস আমাদের বিরোধী নয় এবং আমরা উক্ত হাদীস মতি আমল করে থাকি। তবে যেহেতু উক্ত হাদিসে স্পষ্ট করে হাত কোথায় রাখা উচিত তা বলা হয়নি, সে জন্য আমাদের কে এ ব্যপারে সুস্পষ্ট হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরাম এর আমল দেখতে হবে।
উল্লেখ্য যে কিছু লোক উক্ত হাদিস দ্বারা নামাজে বুকের উপর হাত রাখাকে সুন্নাত প্রমাণ করতে চায়, অথচ উক্ত হাদিসে বুকের উপর হাত রাখা বিষয়ক কোন শব্দ নেই। সুতরাং উক্ত হাদিস দ্বারা বুকের উপর হাত রাখা কোনভাবেই প্রমাণিত হয়না।

২ নং দলীলঃ

عن واأل بن حجر في حديث طويل : ثم وضع يده اليمني علي ظهر كفه اليسري والرسغ والساعد

“ওয়াইল ইবনে হাজর থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে শেষে তিনি বলেন, অতঃপর রসুল (স) ডান হাত কে বাম হাতের কবজি এবং বাহুর উপর রেখেছেন। ইমাম আবু দাউদ হাদিসটি উল্লেখ করে নিরবতা পালন করেছেন”।
(আবু দাউদ ১ম খন্ড ১০৫পৃ, ছহীহ ইবনে খুযাইমা হাদিস নং ৪৮০
৮৮নং অধ্যায় ১ম খন্ড ২৪৩পৃ, মাআরেদে জামান হাদিস নং ৪৪৭ অধ্যয় নং ৬৩ ১ম খন্ড ১২৪পৃ)

৩নং দলীলঃ

عن واأل بن حجر في حديث طويل : ثم وضع يده اليمني علي يده اليسري في الصلاة قريبا من الرسغ

অনুবাদঃ ওয়াইল ইবনে হাজর থেকে বর্ণিত দীর্ঘ হাদীসে শেষে তিনি বলেন অতঃপর রসুল (স) নামাযে ডান হাত কে বাম হাতের কবজির কাছে রেখেছেন।(তালখিসুল হাবির ১ম খন্ড ২২৪ পৃ হাদিস নং ৩৩২, এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯০পৃ)

৪ নং দলীলঃ

عن قبيصة بن هلب عن ابيه قال كان رسول الله صلي الله عليه وسلم يومنا فياخذ شماله بيمينه رواه الترمزي وقال حسن والعمل علي هذا عند أهل العلم من اصحاب النبي صلي الله عليه وسلم والتابعين ومن بعدهم يرون ان يضع الرجل يمينه علي شماله في الصلاة وراي بعضهم ان يضعهما فوق السرة وراي بـعضهم ان يضعهما تحت السرة وكل ذلك واسع عندهم

অনুবাদঃ কুসাইবা ইবনে হালাব (র) থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে রসুল (স) আমাদের নামাযের ইমামতি করতেন এবং ডান হাত দ্বারা বাম হাত কে আকড়ে ধরতেন।
ইমাম তিরমিযি বলেন যে এই হাদিসটি হাসান এর পর্যায়ে। সাহাবায়ে কেরাম ইহার উপর আমল করতেন এবং ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখা কে সুন্নাত মনে করতেন। তবে কেহ নাভীর উপর রাখা কে সুন্নাত মনে করেন এবং কেহ নাভীর নিচে রাখা কে সুন্নাত মনে করেন। তবে উভয় পদ্বতির উপর আমল করা যায়েয হবে। (তিরমিযি শরীফ ১ম খন্ড ৩৪পৃ)


৫নং দলীলঃ

حدثنا يزيد بن هارون قال أنا الحجاج بن حسان قال سمعت أبامجلز أو سألته قلت كيف يضع؟ قال يضع باطن كف يمينه علي ظاهر كف شماله ويجعلهما اسفل عن السرة

হাজ্জাজ ইবনে হাসসান বর্ণনা করেন যে আমি আবু মুজলিজ কে জিজ্ঞেস করলাম যে রসুল (স) নাযাজে হাত কোথায় রাখতেন?
তিনি উত্তর দিলেন যে রসুল (স) নাভীর নিচে ডান হাতের কবজি কে বাম হাতের কব্জির উপর রাখতেন। আল্লামা ইবনে আবি শায়বা হাদিস টি কে ছহীহ বলে আখ্যায়িত করেছেন।( মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১ম খন্ড ৩৯০-৩৯১পৃ, আল যাওহারুন নকী ২য় খন্ড ৩১পৃ)

৬ নং দলীলঃ

قال العلامة ابن التركماني ومذهب ابي مجلز الوضع اسفل السرة حكاه عنه ابو عَمر في التمهيد وجاء ذلك عنه بسند جيد
আল্লামা ইবনে তুরকুমানি বলেন আবু মুযলিজ সাহাবীর আমল ছিল যে তিনি নাভীর নিচে হাত রাখতেন। আবু আমর “তামহিদ” নামক কিতাবে তা বর্ণনা করেন এবং উক্ত হাদিস টি তার থেকে বিশুদ্ব সনদে বর্ণিত হয়েছে।
(বাযলুল মাযহুদ শরহে আবু দাউদ ৪র্থ খন্ড ৪৭৭ পৃ, এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯২পৃ)

৭নং দলীলঃ

حدثنا وكيع عن ربيع عن ابي معشر عن ابراهيم قال يضع يمينه علي شماله تحت السرة رواه ابن ابي شيبة واسناده حسن
“প্রসিদ্ব তাবেয়ি ইব্রাহিম নাখয়ী থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে রসুল (স) নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখতেন। এ হাদিসের সনদটি হাসান। (আসারুস সুনান ১ম খন্ড ৭১পৃ, আসারে মুহাম্মদ ইবনুল হাসান শাইবানি ২৫ পৃ)”
৮নং দলীলঃ

عن ابي حجيفة ان عليا (رض) قال السنة وضع الكف علي الكف في الصلاة تحت السرة

“আবূ যূহাইফা (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আলী (র) বলেছেন যে সুন্নাত হল নামাযে নাভীর নিচে এক হাত কে আরেক হাতের উপর রাখা। (মুসনাদে আহমদ ১ম খন্ড ১১০পৃ, বায়হাকি শরীফ ২য় খন্ড ৩১পৃ, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১ম খন্ড ৩৯১ পৃ )
উক্ত হাদিস টি আবু দাউদ শরীফে ও বর্ণিত হয়েছে তবে সেটি “ইবনুল আরাবী” এর পান্ডুলিপিতে আছে, “লুলয়ী” এর পান্ডুলিপিতে নয়। (এলাউস সুনান ২য় খন্ড১৯৩পৃ, তাকরিরে তিরমিযী ২য় খন্ড ২৪পৃ)
উল্লেখ্য যে উসূলে হাদিস অনুযায়ী যখন কোন সাহাবী রসুল (স) এর কোন আমল কে “সুন্নাত” বলে আখ্যায়িত করে তখন হাদিসটি মারফু হাদিস এর হুকুমে হয়ে যায়। সে হিসাবে উক্ত হাদিসটি মারফু হাদিস।


এখানে একটি প্রশ আছে। তা হল ইমাম আবু দাউদ উক্ত হাদিস বর্ণনা শেষে বলেন, আমি ইমাম আহমদ ঈবণে হাম্বল থেকে শুনেছি যে তিনি আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক কূফি কে জয়ীফ বলেছেন।


উক্ত প্রশ্নের জবাবে বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আজলী বলেন আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক কূফি রাবী হিসাবে কিছুটা দুর্বল হলেও তার তার হাদিস গ্রহণ করা যাবে।
আল্লামা জালালুদ্দিন সূয়ুতি বলেন মুসনাদে আহমদের সমস্ত হাদিস গ্রহণযোগ্য, তাছাড়া সেখানে কিছু হাদিসের মধ্যে সামাণ্যতম দূর্বলতা থাকলেও সে গুলো “হাসান” এর পর্যায়ে। (কানযুল উম্মাল ১ম খন্ড ৯পৃ)

ইবনুল হাজম এবং আল্লামা তাকী উস্মানি বলেন হজরত আলীর উক্ত হাদিসে কিছুটা দুর্বলতা থাকলেও যেহেতু বিভিন্ন সাহাবায়ে কেরাম যেমন হজরত আবু মুযলিজ,হযরত আনাস এবং হজরত আবু হুরায়রা সহ আরো অনেকে তাবেয়ির আমলের দ্বারা নাভীর নিচে হাত বাধা সাব্যাস্ত এবং প্রমানিত, সেহেতু উক্ত হাদিস টি গ্রহণযোগ্য এবং বিশুদ্ব।( মহল্লি ১৩পৃ ৪র্থ খন্ড, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২৪পৃ, এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯৩পৃ)


৯ নং দলীলঃ

عن أنس رضي الله عنه قال ثلاث من اخلاق النبوة تعجيل الافطار وتاخير السحور ووضع اليد اليمني علي اليسري في الصلاة تحت السرة
“হজরত আনাস (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে তিনটি জিনিষ নবীদের সুন্নাত। প্রথম হল ইফতারের সময় হলে বিলম্ব না করা, দ্বিতীয় হল ভোর রাত্রে শেষ সময়ে সেহরি খাওয়া এবং নামাযে নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখা” (আল যাওহারুন নকী ২য় খন্ড ৩১ও ৩২ পৃ)
১০ নং দলীলঃ

عن ابي واءل (رض) قال قال ابو هريرة (رض) اخذ الاكف علي الاكف في الصلاة تحت السرة

“আবু ওয়াইল (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে আবু হুরায়রা (র) বলেছেন যে নামাযে নাভীর নচে কব্জির উপর হাত রাখা সুন্নাত। (আবু দাউদ ১ম খন্ড ২৭৫পৃ)
আল্লামা শাওকানী বলেন নামাযে হাত বাধা সম্পর্কে আবু ওয়াইল এর উক্ত হাদিসের চেয়ে আর কোন সহীহ হাদিস নেই। (এলাউস সুনান ২য় খন্ড ১৯৫পৃ)
১১ নং দলীলঃ

عن وائل بن حجر عن ابيه رضي الله عنه قال : رأيت النبي صلى الله عليه وسلم يضع يمينه على شماله في الصلاة تحت السرة

ওয়াইল বিন হাজর (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন যে আমি রসুল (স) কে দেখেছি যে তিনি নামাযে নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রেখেছেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১ম খন্ড ৩৯পৃ)

হাফেযুল হাদিস আল্লামা কাসেম ইবনে কাতলুবুগা উপরোক্ত হাদিস সম্বন্ধে বলেন উক্ত হাদিসটি বুকের উপর হাত রাখার হাদিসের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং ছহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।

বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা নিমী তালিকুল হাসান কিতাবে বলেন যে উক্ত হাদিসটি যদিওবা মতন এর দিক দিয়ে কিছুটা দুর্বল, তবুও সেটি বুকের উপর হাত রাখার হাদিসের চেয়ে অধিক শক্তিশালী এবং এর সনদ মযবুত।
আল্লামা আবু তৈয়ব মাদানি তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন উক্ত হাদিসটি সনদের দিক দিয়ে অধিক শক্তিশালী।
শেখ আবেদ সিন্দি তাওয়ালিয়ুল আনওয়ার কিতাবে বলেন উক্ত হাদিসের রাবীগণ নর্ভরযোগ্য। (ফাতহুল মুলহিম শরহে মুসলিম ৩য় খন্ড ৩০৮ পৃ, তানযিমুল আস্তাত শরহে মিশকাত ১ম খন্ড ৩০২)

قال محمد : أخبرنا الربيع بن صبيح، عن أبي معشر، عن إبراهيم : أنه كان يضع يده اليمنى على يده اليسرى تحت السرة. قال محمد : وبه نأخذ وهو قول أبي حنيفة رحمه الله. (كتاب الصلاة، باب الصلاة قاعدا والتعمد على شيء أو يصلي إلى ستر

“ইব্রাহিম নাকয়ী থেকে বর্ণিত আছে তিনি নাভীর নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখতেন। (কিতাবুল আসার হাদিস নং ১২১)

ইমাম ইবনে কুদামা হাম্বলী (রাহ) (৬২০ হি.) বলেন, নামাযে কোথায় হাত বাঁধা হবে এ বিষয়ে বিভিন্ন বর্ণনা আছে। (ইমাম) আহমদ (রাহ) থেকে বর্ণিত, দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। এটি (হযরত) আলী রা., আবু হুরায়রা রা., আবু মিজলায রাহ., ইবরাহীম নাখায়ী রাহ., (সুফিয়ান) ছাওরী রাহ., ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) রাহ. থেকে বর্ণিত। (আলমুগনী ২য় খন্ড ১৪৩পৃ)


শায়খ আবুল হুসাইন ইয়াহইয়া ইবনে আবুল খায়ের রাহ. (মৃত্যু ৫৫৮ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু ইসহাক (আলমারওয়াযী) রাহ. বলেছেন, ‘এক হাত অন্য হাতের উপর নাভীর নিচে রাখবে।(আলবায়ান ফী মাযাহিবিল ইমামিশ শাফেয়ী ২/১৭৫)
উল্লেখ্য, ইমাম আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ. শাফেয়ী মাযহাবের একজন প্রসিদ্ধ মনীষী। ইমাম শাফেয়ী রাহ. নাভীর উপর (বুকের নিচে) হাত বাঁধার নিয়ম গ্রহণ করলেও আবু ইসহাক মারওয়াযী নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়মকেই অগ্রগণ্য মনে করেছেন।
ইমাম নববী রাহ. (৬৭৬ হি.) বলেন, (ইমাম) আবু হানীফা, (সুফিয়ান) ছাওরী ও ইসহাক (ইবনে রাহুয়াহ) বলেন, ‘দুই হাত নাভীর নিচে রাখবে। আমাদের (শাফেয়ী মাযহাবের) মনীষীদের মধ্যে আবু ইসহাক আলমারওয়াযী রাহ.ও তা গ্রহণ করেছেন। আর ইবনুল মুনযির তা বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা, (ইবরাহীম) নাখায়ী ও আবু মিজলায রাহ. থেকে।
সুতরাং উপরোক্ত হাদিস সমূহের দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে নাভীর নিচে হাত রাখা রসুল (স) থেকে প্রমাণিত এবং সাহাবা এবং তাবেইন দের যুগে এটার উপর ব্যাপকভাবে আমল হয়েছে এবং খায়রুল করুনের বিশিষ্ট ইমামগণ এটাকে প্রাধাণ্য দিয়েছেন।

বুকের উপর হাত রাখার হাদিস সমুহ

عن واءل بـن حجر رضي الله عنه قال صليت مع النبي صلي الله عليه وسلم فوضع يده اليمني علي يده اليسري علي صدره

“ওয়াইল ইবনে হাজর (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রসুল (স) এর সাথে নামায পরেছি। তিনি বুকের উপর ডান হাতের উপর বাম হাত কে রেখেছেন”। (ছহীহ ইবনে খুযাইমা ১ম খণ্ড ২৪৩পৃ)
উক্ত হাদিস সমবন্ধে মুহাদ্দিসিনে কেরাম কালাম করেছেন এবং উক্ত হাদিস্টি কে সনদ হিসাবে খুবই দুর্বল হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। নিচে আমি সে সম্পর্কে আলোচনা করছি।
(বুকের উপর) শব্দটি বাস্তবে হাদিসে নেই।علي صدرهবলেন আল্লামা নিমী
কারণ উক্ত হাদিসটি মোট সাত টি সুত্রে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ বিভিন্নজন হাদিসটিকে বিভিন্ন সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
১ ইমাম আহমদ তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়ালিদের সুত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
২ ইমাম নাসায়ী “জায়েদা” এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩ ইমাম আবু দাউদ বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪ ইবনে মাজা তে আব্দুল্লাহ ইবনে ইদ্রিস এবং বশর ইবনে মুফাদ্দাল এর সুত্রে বর্ণনা এসেছে।
৫ আহমদ আব্দুল ওয়াহিদ,জুহাইর এবং এবং শুবা এর সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
৬ “মুসনাদে আবু দাউদ তায়ালসি” তে সালাম ইবনে সালিম এর সুত্রে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে।
৭ ছহীহ ইবনে হাব্বানে শু’বা এর সুত্রে হাদিস টি বর্ণিত হয়েছে।
উপরের সাতটি সুত্রের কোনটি তে علي صدره বা বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি নেই। একমাত্র মোমিল ইবনে ইস্মাইল এর সুত্রে বর্ণনাকৃত হাদিসে “বুকের উপর হাত রাখা” শব্দটি আছে। তাছাড়া উপরোক্ত রাবীগণ মুমিলের চেয়ে অধেক গ্রহণযোগ্য। সুতরাং এতগুলো রাবির বীপরিতে মুমিলের মত একজন দুর্বল রাবির বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবেনা। (ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৪পৃ, মারেফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৮পৃ,তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ, তাকরিরে তিযমিযি ২য় খণ্ড ২২পৃ)
বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম বলেন একমাত্র মুমিল ইবনে ইস্মাইল ব্যতিত অন্য কেহ বুকের উপর হাত রাখা শব্দটি বর্ণনা করেনি। একমাত্র তিনিই উক্ত শব্দটি বৃদ্বি করেছেন। সুতরাং সমস্ত রাবীর বিপরিতে মোমিলের মত একজন দুর্বল রাবীর বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। (এলামুল মুয়াক্কিয়িন ২য় খন্ড ৩১২পৃ,তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৬৫পৃ)
তাছাড়া রাবী যদি বিশ্বস্ত ও হন তারপরেও তিনি যদি অণ্যান্য গ্রহণযোগ্য রাবী অথবা তার চেয়ে শক্তিশালী রাবীর বিরোধিতা করেন তাহলে তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য হবেনা। এখানে তাই হয়েছে।
মুমিল ইবনে ইস্মাইল কে মুহাদ্দিসিনে কেরাম রাবি হিসাবে খুবই দুর্বল বলেছেন। আল্লাম নিমী বলেন মুমিল ইবনে ইস্মাইল কে বহু মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা যাহবী “কাশিফ” নামক কিতাবে বলেন মুমিল একজন সত্যবাদি রাবি কিন্তু তার প্রচুর ভূল আছে। তার সম্পর্কে বলা হয়েছে তার কিতাব সমুহ কে মাটির নিচে দাফন করে ফেলা হয়েছিল। ফলে তিনি মুখস্ত হাদিস বর্ণনা করতেন এবং ভূল করতেন।
হাফেযুল হাদিস আল্লামা ইবনুল হাজল আস্কালানি “তাহযিবুত তাহযিব” নামক কিতাবে বলেন ইমাম বুখারি তার সম্পর্কে বলেছেন মুমিল একজন হাদিস আস্বীকারকারী। আল্লামা ইবনুল সাদ বলেন মুমিল গ্রহণযোগ্য, কিন্তু তার প্রচুর ভূল হয়েছে। আল্লামা ইবনুল কানে বলেন মুমিল গ্রহণযোগ্য কিন্তু বেশি ভূল করে। ইমাম দারে কুত্নি তার সম্পর্কে বলেন গ্রহণযোগ্য কিন্তু বেশি ভূল করে। আল্লামা আবু যারআ এবং আবু হাতিম ও অনুরুপ কথা বলেছেন। তাকরিব নামক কিতাবে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে সত্যবাদি কিন্তু তার স্বরণশক্তি খুব খারাপ। আল্লামা ইবনুত তুরকামানি “আলজাওহারুন নাকী” নামক কিতাবে বলেন তার সমস্ত কিতাব দাফন করে ফেলা হয়েছিল। ফলে তিনি মুখস্ত হাদিস বর্ণনা করতেন এবং প্রচুর ভূল করতেন। মুহাম্মদ ইবনে নসর আল মারুযি বলেন কোন হাদিস যদি শুধুমাত্র মুমিল থেকে বর্ণিত হয় তাহলে সে হাদিস সম্পর্কে নিরবতা অব্লম্বন জরুরী। কারণ তার স্বরণশক্তি খুব দুর্বল এবং সে প্রচুর ভূল করে।
(ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৪পৃ, আল উরফুস সুযি ১ম খন্ড২৯০পৃ, মারিফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৫পৃ, বাযলুল মাযহুদ ২য় খন্ড ২৬পৃ, আসারুস সুনান ৬৫পৃ, তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ)
মুমিল ইবনে ইস্মাইল এর উক্ত বর্ণনা ভূল হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হল উক্ত রেওয়াআতটি মুমিল সুফিয়ান সাওরি থেকে বর্ণনা করেছেন এবং সুফিয়ান সাওরির মাযহাব ছিল নাভীর নিচে হাত রাখা। সুতরাং উক্ত কথার দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে মুমিল নিজের থেকে “বুকের উপর” শব্দটি বাড়িয়ে দিয়েছেন।(শরহুল মুন্তাকা ২য় খন্ড ২৭৮পৃ, মারেফুস সুনান ৪৩৮পৃ)
শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানিও উক্ত হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। (সূত্র http://www.masjidsalauddin.com)
তবে মুসনাদে বাজ্জারে একটি বর্ণনা আছে যেখানে উক্ত হাদিসে عند صدره (বুকের কাছে) শব্দ আছে।
এটার জবাব হল উক্ত হাদিসের ভিত্তি হল মুহাম্মদ ইবনে হাজর এর উপর। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা যাহবি তার সম্পর্কে বলেন, তার বর্ণনা গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং উক্ত বর্ণনাটিও গ্রহণযোগ্য নয়। (আযযাওয়াইদ ২য় খন্ড ৩৫পৃ,তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২২পৃ)

২য় দলীলঃ

عن ابن عباس في قوله تعالي فصل لربك وانحر قال وضع اليمين علي الشمال عند النحرفي الصلاة
رواه البـيهقي في سننه

“ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি উক্ত আয়াতের তাফসিরে বলেন নামাযে বুকের কাছে ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখবে”। (বায়হাকী শরীফ)
উক্ত হাদিসের সনদ কে মুহাদ্দিসিনে কেরাম অত্যান্ত দুর্বল বলেছেন। কারণ উক্ত হাদিসের সনদে “রুহ ইবনুল মুসাইয়য়াব” নামে একজন দুর্বল রাবি আছেন যিনি হাদিস শাস্ত্রে পরিত্যক্ত। আল্লামা ইবনে হাব্বান বলেন তিনি জাল হাদিস বর্ণনা করেন। সুতরাং তার হাদিস গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে আদি বলেন তার হাদিসগুলো সংরক্ষিত নয়। এভাবে তিনি হজরত আলী (র) থেকে এরকম যে সকল হাদিস বর্ণনা করেছেন সবগুলোর একই হুকুম। আল্লামা ইবনে তুরকুমানি বলেন উক্ত হাদিসের সনদে ইযতিরাব আছে। আল্লামা মারদিনি “আল জাওহারুন নকি” নামক কিতাবে প্রমাণ করেছেন যে উক্ত হাদিসের সনদ এবং মতন উভয়টিতে ইযতিরাব আছে। আল্লামা ইবনে কাসির উক্ত তাফসির কে বর্ণনা করে বলেন যে উক্ত তাফসিরটি সঠিক নয়। বরং উক্ত আয়াতের সঠিক তাফসির হল কোরবানির দিন কোরবানির জন্তু জবেহ করা। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪র্থ খন্ড ৫৫৮পৃ, তালিকুল হাসান ১ম খন্ড ৪৯পৃ, এলাউস সুনান ২য় খন্ড ২০০পৃ, তানযিমুল আস্তাত ১ম খন্ড ৩০২পৃ, আল ফাতহুর রাব্বানি ৩য় খন্ড ১৭৪পৃ, আলজাওহারুন নকি ২য় খন্ড ৩০পৃ, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২৩পৃ, মারিফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৩৮পৃ,ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৫পৃ)

৩য় দলীলঃ

عن هلب رض كان النبي صلي الله عليه وسلم ينصرف عن يمينه وعن شماله ويضع هذه علي صدره
হুলুব (র) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসুল (স) বুকের উপর হাত রেখেছিলেন।
আল্লামা নিমি “আসারুস সুনান” নামক কিতাবে শক্তিশালী দলীল দিয়ে এ কথা প্রমান করেছেন যে উক্ত বর্ণনার শব্দে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আসল করা হয়েছে। সুতরাং উক্ত ويضع هذه علي صدره যেটাকে ভূলে يضع هذه علي هذه

বর্ণনা দ্বারা দলীল দেওয়া ঠিক হবেনা।
সুতরাং নামাযে বুকের উপর হাত রাখার যে তিনটি দলীল বর্ণিত হয়েছে তিনটি হাদিসেই সনদের দিক দিয়ে অত্যান্ত দুর্বল যা উপরে বিস্তারির আলোচনা হয়েছে।

সার কথা

সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের স্বর্ণ যুগ তথা কুরুনে সালাসার আমল দেখলে আমরা এ ব্যপারে দু ধরণের আমল দেখতে পাই। প্রথমটি হল নাভীর নিচে হাত বাধা এবং দ্বিতীয়টি হল নাভীর উপর বুকের নিচে হাত বাধা। উভয়টি সালাফ থেকে প্রমাণিত এবং উভয়টির উপর আমল করা যাবে যেমন ইমাম তিরমিযি (র)বলেছেন। তবে নাভীর নিচে হাত বাধার দলীল অধিক শক্তিশালী যা উপরে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে বুকের উপর হাত রাখা সালাফ থেকে প্রমাণিত নয় এবং দু একটি বিচ্ছিন্ন বর্ণনায় তা এসেছে যা অত্যান্ত দুর্বল। ইমাম মালেক বুকের উপর হাত রাখাই মাকরুহ বলেছেন। যদি বুকের উপর হাত রাখার সহিহ কোন দলীল থাকত তাহলে তিনি কখনো এটিকে মাকরুহ বলতে পারতেননা।
এখানে আসল কথা হল যেটা খাতেমাতুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আনওয়ার শাহ কাস্মেরি বলেছেন যে আসলে নাভীর নিচে, নাভীর উপরে এবং বুকের কাছে, এ শব্দগুলোর মধে খুব একটা পার্থক্য নেই এবং স্থানগুলোও খুব কাছাকাছি এবং এ শব্দগুলোর অর্থ প্রায় এক।
শায়খ আবেদ সিন্দি এবং শায়খ ইবনুল হুমাম বলেন নাভীর নিচে হাত রাখার হাদিস অধিক শক্তিশালী। যেহেতু বুকের উপর অথবা নাভির নিচে উভয় বর্ণনায় কিছুটা দুর্বলতা পাওয়া যায়, যদি আমরা উভয় বর্ণনাকে বাদ দিয়ে নেকায়া গ্রন্থকার এর কথা মেনে নেই তাহলে সবচেয়ে ভাল হয়। তিনি বলেছেন ডান হাত কে বাম হাতের উপর রাখা ছহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, কিন্তু বুকের উপর অথবা নাভীর নিচে হাত রাখার ব্যাপারে সুষ্পষ্ট এমন কোন হাদিস নেই যার দ্বারা আমল ওয়াজিব হয়। সুতরাং এখানে আমাদের কে কিয়াসের দিকে ফিরে যেতে হবে।নামাযে দন্ডায়মান অবস্থা হল নম্র ভিক্ষুকের অবস্থার মত। দুনিয়াতে আমরা সম্মানিত ব্যাক্তির সামনে দাড়ানোর সময় হাত নিচের দিকে রাখি, কখনো উপরে উঠাইনা। তদ্রুপ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনেও তার সম্মানার্থে আমরা হাত নিচে রাখব । উপরে উঠাবনা।এটাই সম্মানের দাবি। সুতরাং কিয়াস অনুযায়ী নাভীর নিচে হাত রাখাই প্রামাণিত হয়। তবে মহিলারা হাত বুকের উপর রাখবে কারণ সেটার দ্বারা তাদের পর্দা রক্ষা হবে যা তাদের জন্য ফরয। (মিরকাতুল মাফাতিহ ৫০৯পৃ ২য় খন্ড, ফাতহুল মুলহিম ৩য় খন্ড ৩০৬পৃ, মারিফুস সুনান ২য় খন্ড ৪৪৫পৃ, আলুউরফুস সুযি ১ম খন্ড২৯১পৃ, তাকরিরে তিরমিযি ২য় খন্ড ২৪পৃ)

আমাদের দেশে কিছু মানুষ না জেনে না বুঝে এ কথা প্রচার করছে যে নাভীর নিচে হাত বাধার সবগুলো হাদিস দুর্বল। আমি তাদেরকে সবিনয়ে অনুরোধ করব সিহাহ সিত্তাহ সহ অন্যাণ্য ছহীহ হাদিসের কিতাবসমূহ এবং তার বিখ্যাত ব্যাখাগ্রন্থগুসমূহ অধ্যায়ন করার জন্য। তাহলে আমরা সঠিকভাবে সুন্নাহ এর অনুসরণ করতে পারব। তারা আরো বলে থাকেন আমরা নাকি ইমাম আবু হানিফার অন্ধ অনুসরণ করে থাকি এমন কি ছহীহ হাদিস যদি ইমাম আবু হানিফার বিরুদ্বে যায় তারপরেও নাকি আমরা ইমাম আবু হানিফার অনুসরণ করে থাকি। অথচ এ সব কথা সম্পূর্ণ ভূল এবং আমাদের বিরুদ্বে প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়। যাদের প্রকৃত কোরান সুন্নাহর জ্ঞান নেই একমাত্র তারাই এসব কথা বলতে পারেন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই আমরা ইমাম আবু হানিফাকে অনুসরণ করিনা, বরং আমরা কোরান ও সুন্নাহ কে অনুসরণ করি। তবে যে সব মাসয়ালা জটিল এবং সবার বোধগম্য নয় এবং ইজতিহাদের প্রয়োজন সে সব মাসয়ালায় ইমাম আবু হানিফা কোরান ও হাদিস থেকে যে সমাধান দিয়েছেন আমরা শুধু সেটার অনুসরণ করি।
আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয় এর ফতওয়া


وخلاصة الموضوع أن أرجح الأقوال هو استحباب قبض اليد اليمنى على رسغ اليد اليسرى، ووضعهما على أسفل الصدر فوق السرة، ويجوز إرسالهما عند السكون ، وذلك هو قول الشافعية ، هذا وليس هناك دليل صحيح على أن
اليدين يسن وضعهما لأعلى الصدر عندالعنق

“বিভিন্ন মতামত থেকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতামত হল নাভীর উপরে বুকের নিচে ডান হাত কে বাম হাতের উপর কব্জির উপর রাখা। তবে বুকের উপর হাত রাখার উপর কোন ছহীহ দলীল নেই”
ফাতওয়ার শেষাংশে উল্লেখ আছে”


وأنبه إلى أن الأمر واسع كما قال ابن قدامة ،. ولا يجوز التعصب لرأى من الآراء ، والخلاف والتنازع فى هذه الهيئة البسيطة مع عدم الاهتمام بالخشوع الذى هو روح الصلاة والأساس الأول فى قبولها عند اللَّه ، هو ظاهرة مرضية لا صحية . والإسلام قد نهى عن الجدل وبخاصة فى هذه الهيئات البسيطة
“স্বরণ রাখা প্রয়োজন যে এখানে মাসয়ালা প্রসস্ত যে রকম আল্লামা ইবনে কুদামা বলেছেন যে এখানে কোন একটি রায়ের উপর অটল থাকা জায়েয হবেনা। আর নামাজের আসল রুহ এবং কবুল হওয়ার আলামত তথা খুশু এর দিকে দৃষ্টিপাত না করে এ সব নিয়ে ঝগড়া করা (হাত কোথায় রাখব) একটি প্রকাশ্য রোগ। আর ইসলাম বিশেষভাবে এ সমস্ত ব্যাপারে ঝগড়া করা থেকে সম্পূর্ণ নিষেধ করে দিয়েছে। (সুত্র Click This Link

মিশরের প্রখ্যাত আলেম শাইয়খ আব্দুল আলিম মুতাওয়াল্লি বলেন-

ومن هنا فوضع اليدين في الصلاة على أي صورة سنة من سنن الصلاة لا تبطل بفقدها ، ولا ينبغي أن يكون هذا الخلاف الفقهي بين المذاهب مدعاة للتفرقة والشحناء والبغضاء ، فالأمر فيه واسع ، ولا داعي لتخطئة أي فريق .

“নামাযে যে কোন জায়গায় হাত রাখলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে, তার দ্বারা নামাজের কোন ক্ষতি হবেনা। মাযহাবগত এই মতবিরোধ যাতে মানুষের মধ্যে দলাদলি,হিংশা এবং বিদ্বেষের কারণ না হয় সে দিকে সবার লক্ষ রাখা উচিত। কারণ এখানে মাসয়ালা প্রসস্ত এবং কোন দল কে মিথ্যাপ্রতিপন্ন করা উচিত হবেনা”।

فليس هناك من المذاهب الأربعة يذهب إلى وضع اليدين على الصدر. قال الإمام الذهبي رحمه الله: (لا يكاد يوجد الحق فيما اتفق أئمة الإجتهاد الأربعة على خلافه، مع اعترافنا بأن اتفاقهم على مسألة لا يكون إجماع الأمة، ونهاب أن نجزم في مسألة اتفقوا عليها بأن الحق في خلافها) سير أعلام النبلاء 7/17 .
ولا النحر في القيام في الصلاة، وعلى هذا درج الناس إلى وقت غير بعيد. فمن أين جاءنا وضع اليدين على الصدر أو على النحر في الصلاة؟
في ظني أن أول من ظهر بهذا بعض المشتغلين بالحديث الشريف بالهند والمتحاملين على المذاهب الأربعة، أرادوا أن يتميزوا عن أتباع المذاهب الأربعة في صفة الصلاة.. ثم انتقل هذا الأمر إلى بلاد الشام فأخذها مشتغل بالحديث، وظن بعض الناس أن هذا من اجتهاداته وفرائده، فذكر هذا في بعض كتبه وقسا على من يخالفهم.

“চার ইমামের কোন ইমাম বুকের উপর হাত বাধতে বলেননি। প্রখ্যাত আলেম আল্লামা যাহবি বলেন চার ইমামের মতের বাহিরে হক থাকতে পারেনা,চার ইমাম যে বিষয়ের উপর ঐক্যমত্য পোষন করেছেন তার বাহিরে হক থাকার বিশ্বাস করা কে আমরা ভয় করি। (সিয়ারে আলামুন নুবালা ৭ম খন্ড ১৭পৃ)
মানুষ চার ইমামের কথার উপর বহুদিন ধরে আমল করে আসছে, সুতরাং নামাজে বুকের উপর হাত রাখা কোথাথেকে আসল?
আমার ধারণা মতে, ভারতে মাযহাবের বিরোধিতাকারি কিছু লোক এই জিনিষ্টি শুরু করেছে এবং তাদের আসল উদ্দেশ্য হল নামাজের ক্ষেত্রে চার ইমামের বিরোধিতা করা। তারপর ধিরে ধিরে এই জিনিষ্টি সিরিয়ায় চলে গিয়েছে এবং সেখানকারর কিছু লোক এটি গ্রহণ করেছে এবং কিছু লোক মনে করল যে এটা তারা ইজতিহাদ করে বের করেছে। (http://www.masjidsalahuddin.com)

আমাদের দেশে আমরা দেখছি যে কিছু মানুষ নামাজের ব্যাপারে মানুষদের কে বিভ্রান্ত করছেন এবং উদ্দেশ্যগতভাবে হানাফি মাযহাবের আনুসারিত হাদিসগুলোকে দুর্বল বলছেন। যার ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং দলাদলি সৃষ্টি হচ্ছে যা কখনো আমাদের মধ্যে কাম্য ছিলনা। তার মধ্যে একটি বিষয় হল নামাজে নাভীর নিচে হাত রাখা। সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়িন, তাবয়ে তাবেয়ি্‌ন, মুহাদ্দিসিনে কেরাম এবং ফোকাহায়ে কেরাম থেকে নিয়ে শত শত বছর ধরে উক্ত আমল টি চলে আসছে যাকে ফেকাহের ভাষায় তাওয়াতুর বলা হয়। এবং এটাই হল উক্ত আমল টি সুন্নাত হওয়ার সবচেয়ে বড় দলীল। এখন কেহ যদি নতুন করে এসে নতুন করে মনগড়া কিছু চালু করতে চায় তাহলে সেটা হাদিসের অপব্যাখা এবং নিজের মনপূজা ছাড়া আর কিছু হবেনা।
আমার জানা মতে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি নামাজে বুকের উপর হাত রাখতে বলেছেন। এখানে উল্লেখ্য যে শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি হাম্বলি মাযহাবের অনুসারী ছিলেন (সুত্রঃ ওয়েকেপেডিয়া) তবে তিনি এখানে এসে
স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করেছেন এবং বুকের উপর হাত বাধতে বলেছেন।
এখানে যেহেতু তিনি স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করেছেন তাই এটি তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার যাকে ফিকাহের ভাষায় তাফাররুদাত বলে। ফোকাহায়ে কেরামের উসূল হল কেহ যদি স্বীয় মাযহাবের বিরোধিতা করে ভিন্ন মত পোষণ করে তাহলে তার কথা অণ্যান্যদের জন্য দলীল হতে পারেনা। তাছাড়া ফোকাহায়ে কেরামদের ৭টি স্থর আছে ৬০০ হিজরির পরে যারা এসেছেন তারা সবাই ৭ম স্থরের। এবং পরের যুগের কোন ফকীহের কথা ততক্ষন গ্রহণযোগ্য হবেনা যতক্ষন সে পূর্ববর্তী ফকীহদের কথার রেফারেন্স না দেয়। (শরহে উকূদে রাসমুল মুফতি)
শায়খ আলুবানি সম্পর্কে সৌদি আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি আল্লামা বিন বায (র) কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-

الشيخ محمد ناصر الألباني –ناصر الدين الألباني- من خيرة الناس وهو من العلماء المعروفين بالاستقامة والعقيدة الطيبة والجد في تصحيح الأحاديث, وبيان حالها فهو عمدة في هذا الباب, ولكن ليس بمعصوم, قد يقع منه خطأ في تصحيح بعد الأحاديث أو تضعيفها, ولكن مثل غيره من العلماء, كل عالم هكذا له بعض الأخطاء من الأولين والآخرين, فالواجب على طالب العلم أن ينظر فيما صححه وحسنه وضعفه إذا كان من أهل العلم, من أهل الصناعة يعرف الحديث وينظر في طرقه وينظر في رجاله فإن ظهر له صحة ما قاله الشيخ فالحمد لله, وإلا اعتمد .............. من الأدلة التي سلكها أهل العلم في هذا الباب؛ لأن أهل العلم وضعوا قواعد في تصحيح الأحاديث وتضعيفها
“শায়খ নাসিরুদ্দিন আল্বানি প্রসিদ্ব হাক্বানি আলেম ছিলেন কিন্তু তিনি মাসুম নন, কিছু কিছু হাদিস কে ছহীহ এবং যয়ীফ বলার ক্ষেত্রে তার ভূল হয়েছে, যে রকম অণ্যদের হয়। সাধারণত এ রকম ভূল সবারই হয়ে থাকে। সুতরাং আলেমদের উপর ওয়াজিব শায়খ আলবানি যে সমস্ত হাদিস কে ছহীহ অথবা জয়ীফ বলেছেন সে গুলোর ব্যাপারে গবেষনা করা,যাচাই বাচাই করা, যদি শায়খ আলবানির কথা সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে আলহামদুলিল্লাহ, অণ্যথায় ওলামায়ে কেরাম দলীলের আলোকে যেটি বলেছেন সেটি গ্রহণ করবে। কারণ মুহাদ্দিসিন কেরাম হাদিস ছহীহ এবং যয়ীফ বুঝার জন্য কায়েদা প্রনয়ন করেছেন।(সূত্র http://www.al-sunan.org)
আল্লামা বিন বায শাইয়খ আলবানি রচিত “ছিফাতুস সালাত” নামক কিতাবের ও কিছু ভূল ধরেছেন এবং সে গুলোর সংশোধন করে দিয়েছেন। বিস্তারিত জানতে উপরের ওয়েবসাইটটি দেখুন।
আল্লামা বিন বাযের উক্ত উত্তর থেকে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে শাইয়খ আলবানির সব কথা দলীল নয়, বরং সে গুলোর ব্যাপারে গবেষনা করা প্রয়োজন। সে হিসাবে বুকের উপর হাত রাখা এটি তার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। এটি কখনো অন্যদের জন্য দলিল হতে পারেনা।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইসলাম এর প্রথম তিন যুগ এর আমল হল আমাদের দলীল। রসূল (স) বলেন-
خير الناس قرني ثم الذين يلونهم ثم الذين يلونهم

পৃথিবীর সবচেয়ে ভাল মানুষ হল আমার যুগের মানুষ (অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম) এরপর হল তাবেইনগণ এরপর তাবয়ে তাবেয়িনগণ।
উপরোক্ত তিন যুগের জন্য রসূল (স) সার্টিফিকেট প্রদান গিয়েছেন। সুতরাং এর পরে যত বড় আলেম আসুক না কেন, তার কথা কখনো কারও জন্য দলীল হতে পারেনা। যদি কেহ সেটি কে দলীল হিসাবে নিতে চায় তাহলে সে পথভ্রষ্ট হবে।"


উপরের আলোচনার দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে নাভীর নিচে অথবা নাভীর উপরে (বুকের নিচে) হাত রাখা উভয়টি রসূল (স) এর সহীহ হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরামের আমল দ্বারা প্রমাণিত। যে কোন একটির উপর আমল করা যাবে তবে দলীলের দিক দিয়ে নাভীর নিচে হাত রাখা অধিক শক্তিশালী। এর বাইরে কোন আমল রসূল (স) থেকে প্রমাণিত নাই। তাছাড়া এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা, একে অপরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা অজ্ঞতা এবং স্বজনপ্রীতি ছাড়া আর কিছু নয় যা আমরা উপরের আলোচনা দ্বারা বুঝতে পেরেছি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ি আমল করার এবং যাবতীয় ফিতনা থেকে বেচে থাকার তৌফিক দান করুন। আমীন।


Related Link: