বাতিলশক্তি কতিপয় ইসলামী দলকে সহ্য করে কিন্তু 'ইকামতে দ্বীনের সংগঠনকে সহ্য না করার কারণ কি?

 - Tanzil Islam

-------------------------------------
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। অর্থাৎ ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, তথা মানব জীবনের সকল দিক ও বিভাগে ইসলামের দিক নির্দেশনা রয়েছে। আর আল্লাহ তা'য়ালা চান তার মু'মিন বান্দাগণ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ না করে পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের বিধান চলুক। যেমন, মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ-
"হে মুমিনগণ, তোমরা ইসলামে পূর্ণরূপে প্রবেশ কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না । নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু।" (সূরা বাকারাঃ ২/২০৮)
পক্ষান্তরে যারা আল্লাহর (কিতাব) সংবিধানের কিছু অংশ বিশ্বাস করে মেনে চলে আর কিছু অমান্য করে আল্লাহ নিজেই তাদের কিয়ামতের দিন কঠিন শান্তির ঘোষণা করে বলেছেন, 'তারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে খরিদ করেছে। সুতরাং তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না।' (সূরা বাকারাঃ ২/ ৮৫-৮৬)
ফলে যারা প্রকৃত মু'মিন এবং নির্ভেজাল ইসলামী দল তাদের নিকট আল্লাহর বিধানই সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি আল্লাহর বিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি তারা বাতিল বলে মনে করে এবং নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সেই বাতিল কুফুরী আইন অপসরণ করে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। যার কারণে বাতিলশক্তি ঐ সকল মু'মিন ও ইকামতে দ্বীনের সংগঠন সহ্য করতে পারে না।
.
বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭' এর ২য় ধারাতে বলা হয়েছে, "এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।" ('বাংলাদেশের সংবিধান ও সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা' চতুর্দশ সংশোধনী পরবর্তী প্রকাশিত, এম এ সালাম রচিত, কালার সিটি কর্তৃক মুদ্রিত, পৃঃ৯)
এ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, বাতিলশক্তি আল্লাহর বিধানকে ততটুকু সমর্থন করে যতটুকু তার সাথে সামঞ্জস্য হয়। যেসব ইসলামী দল পরিপূর্ণ ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ না করে বরং বাতিলশক্তি যতটুকু সমর্থন করে ততটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থেকে তাদের আনুগত্য করে, সেসব দলকে বাতিলশক্তি সহ্য করবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে বাতিল সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিপূর্ণ ইসলাম তথা ইকামতে দ্বীনকে কখনও সহ্য করতে পারে না। বাতিল সমাজের কর্তারা আল্লাহর বিধান ততটুকু অংশকেই সহ্য করে যতটুকুতে বতিলশক্তির কোন ক্ষতি না হয়। বাংলাদেশে ইসলামের যেসব খেদমত হচ্ছে তাতে বতিল যদি শংকিত হতো তাহলে এসবকে সহ্য করতো না। মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ, ওয়াজ ও তাবলীগ দ্বারা বাতিল সমাজ উৎখাত হবার কোনো ভয় নেই বলেই এসব ইসলামী কাজকে বাধা দেয়া হচ্ছে না। অর্থাৎ বাতিলের পক্ষ থেকে আপত্তি নেই বলেই এগুলো টিকে আছে।
.
আরো কথা হল- বাতিলশক্তি নিজের 'ক্ষমতা'কে ধরে রাখতে কিছু ইসলামী দলকে ব্যবহার করে, লালনপালন করে। তাদের কাজ হল, বিভিন্ন ভাবে 'ইকামতে দ্বীন' এর বিরোধীতা করা। কেউ ইকামতে দ্বীনকে ঠেকানোর জন্য নির্বাচনের মাঠে নেমে মুসলিমদের বিভ্রান্ত করছে। তারা দাবী করছে তাদের ভোট দিলে, সেই ভোট না কি স্বয়ং আল্লাহর নবী পাবেন! আজ কুরআন নাজিল হলে নাকি কুরআনে তাদের বাপ-দাদাদের নাম ও ঘটনা বর্ণনা করা হত! (নাউযুবিল্লাহ!)
আবার কেউ 'ইকামতে দ্বীন'কে ক্ষমতা দখল বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্যতার সাথে সহীহ ভাবে আল্লাহর বিধানের প্রতি ব্যঙ্গ করছে। তারা ইকামতে দ্বীনের বিরুদ্ধে এই বলে ফতোয়াবাজী করছে যে, 'এরা ক্ষমতা লোভী, ক্ষমতা দখলকারী! যে কোন মূল্যে এরা ক্ষমতা দখল করতে চায়।' এই সহীহ গ্রুপটি ইকামতে দ্বীনের সহীহ দুশমন। তারা মনে করে ক্ষমতা তাদের প্রভূদের জন্মগত অধিকার। তাদের প্রভূরা ছাড়া এ অধিকার অর্জনের সুযোগ আর কারো নেই। তাই তারা চায় যে, কিয়ামত পর্যন্ত যেন, তাদের প্রভূরা ক্ষমতা দখল করে আল্লাহর জমিনে আল্লাহ আইন পদদলিত করে কুফুরী আইন জমিনে প্রতিষ্ঠা করে রাখতে পারে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী - নমরূদ, ফিরআউন, আবু জাহেলগং কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতা দখল করে বা ধরে রাখতে পারেনি। তাদের প্রভূরাও পারবে না, ইনশাআল্লাহ। বরং তাদের প্রভূদের অপসরণ করে নবীদের উত্তরসূরীরা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর (দ্বীন) বিধান কায়েম করবেই, ইনশাআল্লাহ! ইমাম মাহদী ও ঈসা (আঃ)ও এই কাজের জন্যই পৃথিবীতে আসবেন।
আর যারা আহলে কিতাবদের মত বাতিল বিধানের প্রতি সন্তুষ্ট থেকে বাতিল শক্তিকে রবুবিয়্যাতের আসনে বসিয়ে আল্লাহর সাথে কুফুরী করছে (তাওবা :৯/৩১) তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ آمَنُوا بِالْبَاطِلِ وَكَفَرُوا بِاللَّهِ أُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ-
আর যারা বাতিলে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহর সাথে কুফুরী করে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত’। (সূরা আনকাবুত : ২৯/৫২)

No comments:

Post a Comment